সাত প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট করবে, ফি নির্ধারণ

অবশেষে সাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে করোনা আরটি পিসিআর টেস্ট ল্যাব স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আরব আমিরাত সরকারের শর্ত অনুযায়ী, দেশটিতে প্রবেশ করতে হলে সঙ্গে থাকতে হবে বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। তাই ল্যাব স্থাপনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন আটকে পড়া প্রবাসীরা। করোনা ভাইরাস শনাক্তে এখন পর্যন্ত বিশ্বে যে কটি নমুনা পরীক্ষা পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে আরটি-পিসিআরই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এ পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্র বা মুখের ভেতর থেকে মিউকাস বা লালা সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে।

জানা গেছে, দেশের বিমানবন্দরে আরটি পিসিআর টেস্ট করানোর ব্যবস্থা না থাকায় আরব আমিরাতগামী প্রায় ৫০-৬০ হাজার প্রবাসী আটকে পড়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সপ্তাহান্তেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় ফের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল বুধবার সাত প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনের অনুমোতি দেয় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

এদিকে পিসিআর টেস্টের দাবিতে মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে আমরণ অনশনে যান প্রবাসীরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয় না ছাড়ার ঘোষণা দেন। দাবি পূরণে তাদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পরে মন্ত্রীর আশ্বাসে তারা অনশন ভেঙে মন্ত্রণালয় ছাড়েন।

প্রবাসীদের সেই কঠোর কর্মসূচির একদিন পরই গতকাল সাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য র‌্যাপিড পিসিআর টেস্ট মেশিন স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড, স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক।

এসব ল্যাব স্থাপনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তিন থেকে ছয় দিন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ভেদে পরীক্ষা ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল কমিটি এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য প্রায় ২৫টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শর্তের মধ্যে রয়েছে সীমিত সময়ের মধ্যে অধিক সংখ্যক পরীক্ষ সম্পন্ন করতে হবে, নমুনা সংগ্রহের পর সঠিক সময়ে প্রতি আরটি পিসিআর মেশিনে আনুমানিক তিন ঘণ্টায় একসঙ্গে ৯৪টি পরীক্ষা করতে হবে। ল্যাবের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ন্যূনতম বায়োসেফটি লেভেল-২ হতে হবে। গুণগত পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ কক্ষ, কুল বক্স প্রতি বুথের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বায়োসেফটি কেবিনেট, ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ডিপ ফ্রিজ, অটো এক্সট্রাকশন মেশিন, ভরটেক্স মেশিন, পিসিআর কেবিনেট, মিনি সেন্ট্রিফিউজ, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ফ্রিজও থাকতে হবে। ল্যাবরেটরিতে চেঞ্জিং রুম, পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বায়ো হ্যাজার্ড ব্যাগ, অটোক্লেভ মেশিন, ওয়াশিং এবং হ্যান্ড ওয়াশিং সুবিধা থাকতে হবে। প্রিজম বা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে নির্ধারিত অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চুক্তি।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে কারিগরি কমিটির বৈঠক হয়। ল্যাব স্থাপনে আগ্রহী ২৩ প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব ওই বৈঠকে যাচাই-বাছাই শেষে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সুপারিশ করে ওই কমিটি। বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের অনুলিপি পরে পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার নেতৃত্বাধীন মূল কমিটি সাত প্রতিষ্ঠানকেই বিমানবন্দরে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দায়িত্ব দেয়। পাশাপাশি পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে গুলশান ক্লিনিকে পরীক্ষা করতে ফি দিতে হবে ১ হাজার ৭৫০, স্টেমজ হেলথ কেয়ারে ২ হাজার, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টারে ১ হাজার ৮৫০, এএমজেড হাসপাতালে ১ হাজার ৮০০, আনোয়ার খান মডার্নে ২ হাজার, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্সে ১ হাজার ৭০০, ডিএমএফআরে ২ হাজার ৩০০ টাকা। সূত্র জানায়, বর্তমানে আরব আমিরাত প্রবাসীদের জন্য এ টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য কোনো দেশের জন্য প্রয়োজন হলে তারাও এর সুযোগ পাবেন।

Print Friendly

Related Posts