রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদের দিতে নির্দেশ

রাজারবাগ দরবার শরীফ এবং ওই দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমানের বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট তার আদেশে রাজারবাগ দরবার শরীফ ও এই দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে এই দরবার শরীফের পীরের অনুসারীদের করা (রিটে উল্লেখিত ৮টি) মামলার তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর ওই দরবার শরীফ সংশ্লিষ্ট কেউ জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িত কিনা, তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে রিট আবেদনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছেন।

ওই পীরের ‘অনুসারীদের করা’ মানবপাচারসহ বিভিন্ন ফৌজদারী মামলায় ভুক্তোভোগী আট জনের করা রিটের শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

হাইকোর্ট তার রুলে এই রিটের ভুক্তভোগীদের হয়রানী, অপদস্ত করতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফৌজদারী মামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

স্বরষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বিশেষ শাখা), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরাধ তদন্ত বিভাগ), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ফাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উপ-মহাপরিদর্শক, গেয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান ও হয়রানীমূলক মামলার বাদিসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

একরামুল আহসান কাঞ্চন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলার নেপথ্যে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর ও তার অনুসারীদের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ সম্বলিত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে সিআইডি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের তিন ভাই এবং এক বোন। ১৯৯৫ সালে তার বাবা ডা. আনোয়ারুল্লাহ মারা যান। রাজারবাগ দরবার শরিফের পিছনে ৩ শতাংশ জমির ওপর ৩ তলা পৈতৃক বাড়ি তাদের। বাবার মৃত্যুর পর কাঞ্চনের বড় ভাই আক্তর-ই-কামাল, মা কোমরের নেহার ও বোন ফাতেমা আক্তার পীর দিল্লুর রহমানের মুরিদ হন। কিন্তু রিট আবেদনকারী ও তার অপর ভাই ডা. কামরুল আহসান বাদলকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেও ওই পীরের মুরিদ করা যায়নি।

এরমধ্যেই একরামুল আহসান কাঞ্চনের মা, ভাই ও বোনের কাছ থেকে তাদের পৈতৃক জমির অধিকাংশই পীরের দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করা হয়। আর একরামুল আহসান কাঞ্চন ও তার ভাইয়ের অংশটুকু পীর এবং তার দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করার জন্য পীর দিল্লুর এবং তার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে চাপ দেয়। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর না করায় পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের সঙ্গে একরামুল আহসান কাঞ্চনের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সে শত্রুতার কারণেই একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়।’

সিআইডি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে জিআর মামলা ২৩টি এবং সিআর মামলা ২৬টি। ইতোমধ্যে জিআর ১৫টি মামলা এবং সিআর ২০টি মামলায় আবেদনকারী আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। যার মধ্যে ৮টি জিআর এবং ৬টি সিআর মামলা রয়েছে।

অধিকাংশ মামলার নথিপত্র সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে একাধিক মানবপাচার, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যার চেষ্টা মামলাসহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন ধর্তব্য ও অধর্তব্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনও না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরীফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

Print Friendly

Related Posts