পূজামন্ডপে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে সবাইকে এক হয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পূজামন্ডপে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের তাঁর সরকার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে।

সম্প্রতি কুমিল্লার পূজা মন্ডপে সৃষ্ট গুজবকে কেন্দ্র করে মন্ডপ ভাংচুর এবং অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে সাথে সাথেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সার্বক্ষণিকই আমরা যোগাযোগ রাখছিলাম এবং এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং যেখানে যেখানে যারাই এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটাবে সাথে সাথে তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে। এটা আমরা অতীতেও করেছি এবং সেটা আমরা করতে পারবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথাযথ শাস্তি তাদের দিতে হবে। মানে এমন শাস্তি যেন ভবিষ্যতে আর কেউ সাহস না পায় সেটাই আমরা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কেন্দ্রিয় পূজা মন্ডপে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি একে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যায়িত করে বলেন, কিছুদিন আগে কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে তার খুব ব্যাপক ভাবেই তদন্ত হচ্ছে অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করবোই এবং আমরা তা করতে পারবো কারণ এখন প্রযুক্তির যুগ। এটা বের করা যাবে এবং সে যেই হোক কেন যে ধর্মেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। আর আমরা তা করেছি এবং করবো।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন ম-ল। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ স্বামী পূর্নাত্মানন্দ মহারাজ।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জীর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।

জাতির পিতার রেখে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক আদর্শ নিয়েই তাঁর সরকার পথ চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটা অসম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষ সকলে একসঙ্গে বসবাস করবে এবং যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। অর্থাৎ ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। এটা বাংলাদেশে সবসময় ছিল এবং আছে যে প্রতিটি উৎসবের সময় সকলে একসঙ্গে সামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু, মাঝে মাঝে কিছু দুষ্ট চক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায়।

৩২ হাজার ১১৮টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূর্জা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার করোনার কারণে পূজা সীমিত পরিসরে হয়েছিল। এবার করোনার প্রকোপ কমে আসায় মন্ডপের সংখ্যাও বেড়েছে এবং ১ হাজার ৯০৫টি বেশি পূজা মন্ডপে এবার শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত আছে। তবে, স্থায়ী মন্দির ছাড়া যখন অস্থায়ী মন্দির হয় তখনই কিছু লোক সুযোগ নেয়।

তিনি বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদসহ যারা আছেন তারা বিষয়টি যেন মনিটরিং করেন এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের এ ব্যাপারে একটা নীতিমালা থাকা দরকার কোথায় কতগুলো মন্ডপ হবে এ বিষয়টি তারা নির্ধারণ করে দিতে পারেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি দলটির সভাপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও অনুরোধ করব তারাও যেন নিজ নিজ এলাকার ম-পগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতা করেন। যা তারা করেও থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই দেশের মানুষ সুন্দরভাবে উৎসব উদযাপন করবেন। তারা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবেন সেটিই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts