আবহমান কাল থেকেই যুদ্ধের ময়দানে জাতীয় মর্যাদার প্রতীক ‘পতাকা’ বহন করার রীতি প্রচলিত আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলেন, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি’।
তিনি বলেন, পতাকা হল জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। পতাকার মান রক্ষা করা সকল সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব এবং জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের।
তিনি বলেন, আজ ‘জাতীয় পতাকা’ আপনাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় আমি ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও একাডেমিকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ যে কোন জাতীয় প্রয়োজনে এই বাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্ট এর নিকট নতুন পতাকা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিটকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘অপারেশন কভিড শিল্ড’ এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যগণ করোনা প্রতিরোধকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা। যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।
অনুষ্ঠানের শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেনাপ্রধান চট্টগ্রামের হালিশহরস্থ আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলে ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও একাডেমিকে জাতীয় পতাকা প্রদান এবং মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্টকে আর্টিলারির নতুন পতাকা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠান থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালামও জানানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারির নিকট ‘নতুন পতাকা’ হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি এই ইউনিটের সকল সদস্যগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রওশন আরার আত্মত্যাগ ছিলো বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকে সম্মানীত এবং স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর জন্মলাভ করে ‘রওশন আরা ব্যাটারী’।
তিনি এ সময় ১৯৭৫ সালের ১১ই জানুয়ারি কুমিল্লা মিলিটারি একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতার দেয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেন ‘আমার মনে আজ যে কি আনন্দ, তোমাদের আমি তা ভাষায় প্রকাশ করে বলতে পারব না। যখন আমি আগরতলা মামলায় বন্দি ছিলাম, যখন পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী জেলে বন্দি ছিলাম, তখন ভাবতে পারিনি যে, একদিন এখানে তোমাদের প্যারেড হবে।’