বাবার কাছে কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরা হল না নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান ১৭ বছরের এই তরুণ।
নটর ডেম কলেজে তিনি উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটিতে নিজ বাড়িতে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন ছোট।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, কয়েকজন পথচারী এবং নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা নাঈমকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার পর নাঈমকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের একজন আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হল মার্কেট মোড়ে বায়তুল মোকাররমগামী সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাক মোড় ঘুরেই নাঈমকে চাপা দেয়।
বাবা আর নটর ডেমে যাবে না
বাবার আর্থিক কষ্ট বুঝত নাঈম হাসান; তাই কলেজে যাওয়ার সময় টাকা নিতে চায়নি; এই তরুণের মৃত্যুর পর এখন সেই কথাটিই বড় হয়ে বাজছে বাবা শাহ আলমের মনে।
ছেলের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করে তিনি বলছিলেন, বাবা আর নটর ডেমে যাবে না! চলে গেল আমাকে ছেড়ে! আজ সকালেও আমাকে বলছিল- বাবা কলেজে যাইতে আর টাকা দেওয়া লাগবে না, আমি তো বড় হয়ে গেছি’।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়ে জরুরি বিভাগের মর্গে ছেলের লাশ দেখতে পান শাহ আলম।
কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে ট্রলির উপর রাখা ছেলের নিথর দেহটি দেখে প্রথমে নির্বাক হয়ে যান তিনি। কোনো শব্দ না করে চেয়ারে বসেছিলেন অনেকক্ষণ। তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন।
নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাঈম থাকতেন কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটে; স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলমের বসবাস। বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে নিয়ে ঢাকার নীলক্ষেতে ‘সৈনিক বুক সেন্টার’ নামে একটি বইয়ের দোকান খোলেন শাহ আলম। তবে মহামারীতে তার ব্যবসা প্রায় ডুবতে বসে।
আল আমিন নামে ওই মার্কেটের একজন দোকানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নীলক্ষেতের কাছেই ইউনিভার্সিটি গভর্নমেন্ট ল্যবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে নাঈম। তখন প্রায়ই বাবার দোকানে আসতেন। ছোট্ট দোকানের ভেতরে বাবা শাহ আলম প্রায়ই নিজ হাতে ছেলেকে খাইয়ে দিতেন। দুই ছেলেকে ঘিরেই ছিল শাহ আলমের জগৎ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সন্ধ্যায় নাঈমের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর দাফনের জন্য লাশ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নেওয়া হবে বলে জানান নিহতের বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মুনতাছির মামুন।
নাঈম (১৭) বুধবার দুপুরে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান।
নাঈমের মৃত্যুর সংবাদে হাসপাতালে ছুটে আসে তার বন্ধুরা। নটর ডেমের ছাত্র তাওফিক বলেন, মর্নিং সেশন সাধারণত বেলা সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। তবে আজ ক্লাস শেষ হয় একটু আগে। বেলা সাড়ে ১১টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নিহত সহপাঠি নাঈম হাসানের মৃত্যুর বিচার দাবিতে বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।
ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নিহত সহপাঠি নাঈম হাসানের মৃত্যুর বিচার দাবিতে বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।
সহপাঠি নিহত হওয়ার পর ঢাকার গুলিস্তানে সড়ক অবরোধ করেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল ৫টার দিকে শিক্ষকরা এসে নিয়ে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকদের কথায় অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে তারা নিহত সহপাঠী নাঈম হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের দাবি জানান।
এদিকে এই দুর্ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।