ময়লার ট্রাকে ধাক্কায় মৃত্যু, সময় বেঁধে দিয়ে সড়ক ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা

সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে দিনভর অবরোধ-বিক্ষোভের পর দোষীদের বিচার ও বাসে ‘হাফ ভাড়ার’ দাবি পূরণে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে রাস্তা ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা।

এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ের বিষয়ে কোনো আশ্বাস না পেলে আগামী শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে।

বুধবার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুর পরপরই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, ফার্মগেট, শান্তিনগর ও উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। নটরডেম কলেজের কয়েকশ ছাত্র মতিঝিল হয়ে বেলা ১১টার দিকে গুলিস্তানে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেখানে বেলা ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা নগরভবনের দিকে রওনা হন।

বেলা ৩টার পর নগর ভবনের ফটক খুলে শিক্ষার্থীরা হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা স্লোগান দিতে থাকে: ‘মেয়র তোমার দেখা চাই, নাঈম হত্যার বিচার চাই’। পরে বেলা ৪টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র ফজলে নূর তাপস শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, “তোমাদের যে দাবি সেগুলো শুধু তোমাদের নয় আমারও দাবি। আমার আরও কিছু দাবি আছে। তবে তোমরা তোমাদের কথা সব জায়গায় বলতে পার, আমি পারি না।”
মেয়রের বক্তৃতার পর নগরভবন থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সামাল দিতে নটরডেম কলেজের কয়েকজন শিক্ষকও সেখানে ছিলেন।

একই দাবিতে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এবং বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে বিক্ষোভ করে। সেখানে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি বাস তারা এক ঘণ্টা আটকে রাখেন চালক লাইসেন্স দেখাতে না পারার কারণে।

এ বিষয়ে পুলিশ বাসের চালক লাল মিয়া বলেন, “লাইসেন্স আছে, তবে সেটা অফিসে রাখা আছে।”

এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাক আটক করে শিক্ষার্থীরা। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই অভিযোগ তুলে তারা গাড়িটির কাচ ভাঙচুর করে।
তবে লাইসেন্স আছে দাবি করে সিটি কর্পোরেশনের চালক শাহরিয়ার বলেন, “লাইসেন্স হয়েছে, তবে এখনও স্মার্ট কার্ড পাইনি। একটি অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ লাইসেন্স হিসেবে দেওয়া হয়েছে।”

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বেইলি রোডের মুখে শান্তিনগরে এবং উত্তরায় রাজউক ও মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে।

স্লোগান, মিছিল আর প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কনে দিনভর চলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এসময় তারা পুলিশ, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার যানবাহন আটকে কাগজপত্র পরীক্ষা করে, যেমনটা ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় দেখা গিয়েছিল।

বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে বিক্ষোভ চলছিল। এর মধ্যে বুধবার গুলিস্তানে নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

 

Print Friendly

Related Posts