রাজধানীর রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও তিনটি বাস ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে দায়ী বাসটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর একে একে আরও ৮টি বাসে আগুন দেন তাঁরা। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিআইটি রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে বাসচাপায় ওই শিক্ষার্থী নিহত হন।
পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনার পর বাস থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত এক ব্যক্তিকে জনতা আটক করে তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তিনি বাসচালক।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম রাত সোয়া ১১টার দিকে বলেন, ‘আব্দুল্লাহপুর থেকে সায়েদাবাদগামী অনাবিল বাসের ধাক্কায় একজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’
মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের জন্মদিন ছিল সোমবার। এ দিনেই সে পাড়ি জমাল না–ফেরার দেশে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হয় সে।
২০০২ সালের ২৯ নভেম্বর জন্ম মাইনুদ্দিন ইসলামের। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাবা আবদুর রহমান রামপুরায় একটি চায়ের দোকান চালান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাইনুদ্দিন সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
বাসের চাপায় ছেলে মারা যাওয়ার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাইনুদ্দিনের মা রাবেয়া বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জন্মদিনে আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে, মানতে পারছি না।’
ছেলের মৃত্যুর খবর কিছুতেই মানতে পারছেন না বাবা আবদুর রহমানও। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই বড় ছেলে মনির ও পাশে থাকা আত্মীয়স্বজনের উদ্দেশে বলছেন, ‘তোরা আমার পুতরে ফোন দে। ফোন দিলেই আমার পুত বাসায় চলে আসবে। ভিক্ষা করে হলেও আমার পুতরে কলেজে পড়াব।’
পূর্ব রামপুরার তিতাস রোডের মোল্লাবাড়ির ভাড়া বাসায় আহাজারি করতে করতে আবদুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে ছেলে রাত ৯টা পর্যন্ত চায়ের দোকানে ছিল। পরে আমি দোকানে আসার পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয় সে। যাওয়ার সময় ছোলা খাওয়ার কথা বলে ১০ টাকা আবদার করলে আমি টাকা দিই। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, আমার ছেলে মারা গেছে।’
নিহতের স্বজন বাদশা মিয়া বলেন, ‘মাইনের মুঠোফোন থেকে কল আসে। আমি ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বলেন, মাইন বাসের ধাক্কায় মারা গেছে। পরে আমি ফোন করে আমার ভাই সাদ্দামকে (মাইনুদ্দিনের দুলাভাই) জানাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দেখে আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
রিপন মিয়া নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাস্তার পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে আসার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। অনাবিল ও রাইদা পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করছিল। অনাবিল বাসটি মাইনুদ্দিনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে। এ ঘটনার জেরে দিবাগত রাত দেড়টা পর্যন্ত এই রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, জনতার দেওয়া আগুনে নয়টি বাস পুড়ে গেছে। আরও তিনটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। খবর পেয়ে রামপুরা ও হাতিরঝিল থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত একটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বাস ও চালককে আটক করেছি। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। জনতার সঙ্গে মিশে কেউ নাশকতা করেছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখছি।’