ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা পাস: সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ঘোষিত সর্বোত্তম নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) এসংক্রান্ত প্রবিধানমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বিশ্ব জুড়ে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। “খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১” নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, বর্তমানে তরুণ এবং মাঝবয়সি জনগোষ্ঠির মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ এর অন্যতম কারণ। প্রবিধানমালাটি বাস্তবায়িত হলে দেশে হৃদরোগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অত্যন্ত সময়োপযোগী এই পদক্ষেপের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।

বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের রিজিওনাল ডিরেকটর বন্দনা শাহ্ বলেন, ভারত, ব্রাজিল, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ থেকে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত হলো। ট্রান্সফ্যাট মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব ও উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। এই নীতি হৃদরোগ ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে একইধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে।

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট একটি ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের ফলে উচ্চহারে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যু, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) এবং স্বল্প স্মৃতিহানি (কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট) জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও), যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেই পরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহৃত হয়। ডব্লিউএইচও ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ থেকে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল তেল, ফ্যাট ও খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করলো।

এবিষয়ে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রবিধানমালাটি ভোক্তাস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

খাদ্যদ্রব্য থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)-কে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং এর সহযোগী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নীতিনির্ধারণী ও তৃণমূল পর্যায়ে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

জিএইচএআই এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত হলে চিকিৎসা ব্যয় কমবে, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে।

২০১৯ সালে পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও (পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল) ব্র্যান্ডসমূহের নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২% মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ডব্লিউএইচও প্রকাশিত ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগে মৃত্যুর ৪.৪১ শতাংশের জন্য দায়ি ট্রান্সফ্যাট। প্রবিধানমালাটি ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সূত্র: মাহমুদ আল ইসলাম শিহাব, প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর, ট্রান্সফ্যাট এলিমিনেশন প্রজেক্ট

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts