মুরাদ চট্টগ্রামে, ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠালেন

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, পদত্যাগের জন্য তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কথা বলেছেন।গিয়াস বলেন, “স্যার পদত্যাগপত্র মেইলে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছেন।”

মুরাদ হাসান কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্যার কোথায় রয়েছেন, তা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।” তবে মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা জানান, তথ্য প্রতিমন্ত্রী এখন ‘চট্টগ্রামের দিকে’ অবস্থান করছেন।গিয়াস জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ইমেইলে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র আসে।

পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সচিব স্যারের অপেক্ষায় আছি।  তিনি (সচিব) পরবর্তী নির্দেশনা দিবেন।”

বিধি অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র কার্যকর হওয়ার জন্য এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়তে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যেরর কারণে মুরাদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েক দিন ধরে সমালোচনা চলছিল।

এর মধ্যে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে তার অশালীন ফোনালাপের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়লে সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মুরাদের পদত্যাগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা জানান।

রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, আগামীকালের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করার জন্য, এ বিষয়টা আমি যাতে জানিয়ে দিই। রাত ৮টার দিকে আমি তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি জানিয়ে দিয়েছি।”

ওই অডিওটির বিষয়ে মুরাদ হাসানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সোমবার সারাদিন চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে জনসমক্ষেও দেখা যায়নি, এক অনুষ্ঠানে তার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি।

এর মধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, মুরাদ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন। তার বক্তব্য পরে তৎকালীন ছাত্রনেতারাও নিশ্চিত করেন।

ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে আসার এই তথ্য প্রকাশের আগে রোববার থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরাদ হাসান ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এসবিবিএস পাস করেন। ২০১১ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে এম ফিল ডিগ্রি নেন।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনীতে দাবি করা হয়েছে, ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া মুরাদ ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘কার্যকরী সদস্য’ ১৯৯৭ সালে ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’ এবং ২০০০ সালে ‘সভাপতি’  নির্বাচিত হন।

২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন মুরাদ। পাশাপাশি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, জামালপুর জেলা কমিটির ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’র দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।

২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ২০১৯ সালে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Print Friendly

Related Posts