পৌষের শেষ দিন মানেই পৌষসংক্রান্তি

মাঘের আগমণকে জানান দিয়েই বিদায় নেয় পৌষ। আর পৌষের শেষ দিন মানেই পৌষসংক্রান্তি। দিনটি উৎসবের। কেবল গ্রামেই নয়, এই দিনে নানা আয়োজনে মেতে ওঠে পুরনো ঢাকাও। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি, পটকা ফোটানো এসব থাকে এ উৎসবে।

প্রতিবারের মতো আজ সকাল থেকেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে অবস্থান নিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়েছে। বর্ণিল এ উৎসব চলবে বিকেল পর্যন্ত। রাতে থাকবে আতশবাজির আয়োজন। পিঠা-পুলি সুস্বাদু খাবার সঙ্গীত নৃত্যায়োজন কিছুই বাদ থাকবে না।

এ উৎসব সাকরাইন নামে উদযাপিত হয়। আজ (শুক্রবার) পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় উদযাপন হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। তবে এ বছর থার্টিফার্স্টে ফানুস পড়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটায় সাকরাইন উৎসব নিয়ে সতর্ক অবস্থানে যাচ্ছে পুলিশ। আতশবাজির বিকট শব্দে নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে।

গত বছর সাকরাইন উৎসব উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সিটি কর্পোরেশনও। ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগানে বিশাল উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫ ওয়ার্ডে এ উৎসব আয়োজন করা হয়। তবে এবার করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সিটি কর্পোরেশনের আয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে আগের মতোই যে যার মতো করে উদযাপন করছেন সাকরাইন।

বাঙালির কাছে পৌষসংক্রান্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। পৌষের শীতে পিঠা-পুলির আয়োজন আবহমান বাংলার এক চিরায়ত সংস্কৃতি। এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পৌষসংক্রান্তিতে। এর আরেক নাম মকরসংক্রান্তি। পৌষ মাসের শেষ দিন এটি পালন করা হয়। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে বাড়ির উঠানে দৃষ্টিনন্দন আলপনা দেন।

এ দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা পুড়িয়ে (চিতই পিঠা বানানোর মাটির পাত্র) পিঠা তৈরি শুরু হয়। অনেকে আজো এই দিনের আগে পিঠা খান না। পৌষ মাসের শেষের দিন হলেও সাধারণত দুই-তিন দিন ধরে হরেক রকম পিঠা বানানোর কাজ চলে বাড়িতে বাড়িতে। চলে জামাই নিমন্ত্রণ অথবা জামাইয়ের বাড়িতে তৈরি পিঠা পৌঁছে দেওয়া। একসময় গ্রামবাংলায় বেশ ঘটা করে এই দিন পালনের রেওয়াজ ছিল। ক্রমেই শহুরে সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব। সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন বোধ। প্রকৃতি ও শস্য শ্যামল প্রীতি থেকে ক্রমেই আমরা দূরে সরে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts