সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিকের বর্জ্যে মাছের ভাস্কর্য 

প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন সাগর ও প্রবালময় এই সেন্ট মার্টিন, যত্রতত্র ফেলবেন না তাই প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন। এই স্লোগান সম্বলিত ব্যানারে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে তৈরি হয়েছে জনসচেতনতামূলক কোরাল মাছের ভাস্কর্য।
সেন্ট মার্টিন বেড়াতে গিয়ে পর্যটক, স্থানীয় দোকানদার-জেলে ও বাসিন্দাদের ফেলা প্লাস্টিকের বর্জ্য দিয়ে কোরাল মাছের ভাস্কর্যটির সঙ্গে একটি কচ্ছপের ভাস্কর্যও  তৈরি করা হয়েছে।
সৈকতের যত্রতত্র ও পানিতে ফেলা পরিত্যক্ত বর্জ্য দিয়ে বানানো এ ভাস্কর্যগুলো পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতনতা বাড়াতে তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছেন উদ্যোগ গ্রহণকারীরা।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) আর্থিক সহায়তায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদ ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নেয়।
মেরিন বায়োলজিস্ট শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, ‘আমি ২০১১ সাল থেকে সেন্ট মার্টিনে গবেষণা করছি। আমি মূলত সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং তার সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছি। এই কাজগুলো করতে গিয়ে আমি লক্ষ্য করলাম যে কিছু ফ্যাক্টর সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে। সৈকতের যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল ও অন্যান্য ময়লা সামুদ্রিক জৈববৈচিত্র্য নষ্ট করার মূল কারণ। পর্যটকদের অসচেতনতার কারণেই বিভিন্ন টিনের কৌটা, প্লাস্টিকের বোতল ও অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা সেখানে ফেলা হচ্ছে। এসব খেয়াল করে আমি চিন্তা করলাম প্লাস্টিক বিষয়ে মানুষকে সচেতনতার জন্য গবেষণার পাশাপাশি আমার কিছু ভূমিকা রাখা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমার টিম যখন স্কুবা করে তখন সমুদ্রের নিচে দেখা যায় সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য যেমন কোরাল। এই কোরালের উপর অনেক প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের বোতল, টিন এবং টিনের কৌটা পড়ে আছে। ছেঁড়া জাল কোরালের উপর পড়ে আছে। এই জালগুলো যখন কোরালের উপর পড়ে তখন কোরালের নিচে ব্লিচিং ঘটে কোরালটি মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ করতে চেয়েছিলাম পরে ভাবলাম সেগুলো পড়ে কাগজগুলো সমুদ্রসৈকতে ফেলে দিবে ফলে আবার ময়লা-আবর্জনা  হয়ে যাবে। পরে পরিত্যক্ত আবর্জনা দিয়েই কোরাল মাছের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়।’
ভাস্কর্য তৈরিতে সহযোগিতায় ছিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ইতোমধ্যে কোরালের এই ভাস্কর্যটি পর্যটকসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেন্ট মার্টিনে পা রাখতেই  কোরালের ভাস্কর্যের পাশে গিয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়েছে।
পরিবেশ দূষণের হাত থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাঁচানোর উদ্যোগ হিসেবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) একটি গবেষণা কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে। এতে সৈকত ও সমুদ্র তলদেশে প্লাস্টিকের ধরন ও পরিমাণ নিরূপণ করে এর থেকে পরিত্রাণে সম্ভাব্য উপায় সম্বলিত একটি রূপরেখা ও সুপারিশমালা প্রণয়ন করে সরকারকে দেয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব।
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts