মোহাম্মদ নাজমুল হক
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে উদযাপন করা হয়। এই দিনে পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধব এক হয় ভালোবাসার বন্ধনে।
প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেবদেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন।লোকেরা দেবদেবীর রানী জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে বিশ্বাস করত।তাদের বিশ্বাস ছিল জুনোর সন্তুষ্টি ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। এ কারণেই অনেকে মনে করেন এটিই ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ।
কারও কারও মতে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর নামানুসারে দিনটির নাম ভ্যালেন্টাইন্স ডে করা হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর অনেক যুবক যুবতীরা তাকে কারাগারের দেখতে যেত এবং ফুল উপহার দিত। জনৈক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও তাকে দেখতে যেত এবং তারা অনেকক্ষণ ধরে প্রাণ খুলে কথা বলত। এক পর্যায়ে ভ্যালেন্টাইন ঐ অন্ধ মেয়ের প্রেমে পড়ে যায় এবং মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে তার আধ্যাত্মিক চিকিৎসা শুরু করেন। অবশেষে ভ্যালেন্টাইনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমান সম্রাট কর্তৃক ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে ফাদার অন্ধ মেয়েকে বিদায় জানিয়ে একটি পত্র লেখেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে হত্যার পর কারা প্রধান পত্রটি ওই অন্ধ মেয়েটির হাতে পৌঁঁছে দেন, যেখানে তিনি দস্তখত করেছেন সেই জায়গায় লেখেন ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন (From Your Valentine)।
মৃত্যুর পরের বছর হতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে দিবসটিকে স্মরণীয় করতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন শুরু করেন। এ রীতি ইউরোপ মহাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। যা পরবর্তীতে ইউরোপ ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে সর্বজনীন হয়ে ওঠে।
বর্তমানে অন্যান্য দেশের ন্যায় এই দিনটিও আমাদের দেশে উৎসবে পরিণত হয়েছে। বছরব্যাপী ভালোবাসা বজায় থাকলেও এই দিনে প্রিয়জনরা যেন একটু বেশি করেই ভালবাসতে চান। তরুণ-তরুণীরা এ দিনটিকে রাঙায় নানাভাবে। এদিনে ভ্যালেন্টাইন কে প্রপোজ থেকে শুরু করে কার্ড, চকলেট, লাল গোলাপ ছাড়াও বাহারি উপহার দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এসবের পাশাপাশি প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়াসহ নানা রকম আনন্দে দিনটিকে পার করেন তরুণ-তরুণীরা। বর্তমান সময়ে এ দিবসের কদর আকাশচুম্বী। দিবসটি উপলক্ষে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম পরিলক্ষিত হয়।দিবসটি উপলক্ষে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।
সারা বিশ্বের সকল মানুষ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা- এ দিবসে এই হোক আমাদের ব্রত।
লেখক:হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, বিআইএ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়।