বসন্ত ঋতুরাজ। বসন্ত ফুল ফুটবার দিন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন, অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে এখন প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতা। ধীর গতিতে চলা বাতাস জানান দিচ্ছে নতুন কিছুর। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক হলো প্রাণে দোলা দেওয়া রূপময়ী ফাল্গুনের।
শীতের খোলস থেকে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। পলাশ, শিমুলে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। বসন্ত মানেই যৌবনের গান।
`ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত…। কিংবা আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোঁটে কত বাঁশি বাজে কত পাখি গায়..। কিংবা এতটুকু ছোঁয়া লাগে, এতটুকু কথা শুনি, তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী..। এসব অমর পংক্তিমালা আমাদের দেহে-মনে-বোধে-মননে তরঙ্গায়িত হবে বারবার। জীবনে দোলা জাগাবে। মননে ও প্রকৃতিতে জেগে উঠবে মায়ার খেলা প্রাণের খেলা ভালবাসার খেলা।
বড় কঠিন নগরের বাস্তবতা। বসন্তে জেগে ওঠা অপরূপ প্রকৃতি চোখে দেখার সুযোগ পায় না নগরবাসী। কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণচূড়া আর আমের মুকুলে অবগাহণ করে বইয়ের পাতায়। তবু ফালগুনের প্রথম দিনে খুঁজে পেতে চায় বসন্তের আবহ। গায়ে হলুদ জামা আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়ে তারা। রাজধানীর বিবর্ণ প্রান্তরে বিকশিত হতে চায় ফাল্গুনী তরঙ্গে। পায়ে পায়ে ছুটে আসে। মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে শাহবাগ চারুকলা কিংবা অন্য কোন আকর্ষণীয় প্রাঙ্গণ। উৎসবে মিলিত হয়। মিশে যায় অঘোষিত বসন্ত শোভাযাত্রায়।
নাগরিক ব্যস্ততা এড়িয়ে একটু নিরালা মিললেই ভেসে আসে কোকিলের কুহু, মৃদুমন্দ হাওয়ায় ভেসে আসা ফুলের গন্ধ জানিয়ে দিয়ে যায় ঋতুরাজের আগমনী। বসন্ত মানে তো শুধু পলাশ আর শিমুল ফুলের রং ছড়ানোই নয়, বসন্ত তো ঝরা পাতার, ঝরা ফুলের আনন্দ-গানও।
কংক্রিটের নগর জীবনে বসন্তের দেখা না মিললেও তাকে জীবনচরণে জড়িয়ে রাখেন কিন্তু নগরবাসীই। এই ফাগুনের প্রথম দিনটি যেন বাঙালির কাছে এক উৎসবের দিন। উৎসবের রঙে রাজধানীর শাহবাগ, চারুকলা, টিএসসি, বাংলা একাডেমি প্রান্তর কিংবা অন্য কোথাও মেতে ওঠে তারুণ্য।
নগরজীবনের এই কোলাহলে মানুষ নিষ্প্রাণ, হিসেবী, প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন। ফাগুনের এইদিনে তাই সবাই যেন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চায়, মিলতে চায় প্রিয়জনের সঙ্গে। সেই মিলবার তাগিদে সারাদিন ধরে নগরীর বিভিন্নস্থানে বসন্ত উৎসবে মেতে বাঙ্গালি আমন্ত্রণ জানায় নতুন সজীব প্রাণময় প্রকৃতিকে।