সুন্দরবনে মুগ্ধ রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ

শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা: শ্যামলে সবুজে ঢাকা নদীখাল ঘেরা সুন্দরবনের অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দেখে ডেনমার্কের রাজকুমারী অভিভূত। সুন্দরবন জনপদের পেশাজীবী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গিয়েই বললেন, হাউ আর ইউ ? জবাব এলো, উই আর ফাইন।

মুখে ফুটে উঠলো ভুবন ভোলানো মিষ্টি হাসি। এভাবেই স্মিত হাসি নিয়ে দক্ষিণ উপকূলের দুর্যোগ কবলিত ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির শিকার হওয়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের গ্রাম কুলতলির বাসিন্দাদের সঙ্গে সময় কাটালেন ডেনমার্কের প্রিন্সেস ম্যারি এলিজাবেথ।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকালে তিনি হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজার থেকে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের টাইগার পয়েন্টে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির ও পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। পরে তিনি গাড়িতে ৩ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের চুনা নদীর তীরে কুলতলি গ্রামে পৌঁছান।

সেখানে কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে তিনি কথা বলেন গ্রামবাসীর সঙ্গে। গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া নারী পুরুষ তাকে স্বাগত জানিয়ে হাসিমুখে বরণ করে নেন। এসময় প্রিন্সেস ম্যারি কিছুক্ষণের জন্য আড্ডা আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন স্কুলগামী শিশুদের সঙ্গেও। তিনি পুষ্পা রানী মন্ডল ও শিলা রানী মন্ডলের বাড়িতেও কয়েক মিনিটের জন্য অতিথি হন।

প্রিন্সেস ম্যারি বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস কর্তৃক খননকৃত একটি খাল পরিদর্শন করেন। এই খালের পানি সেচ নিয়ে ধান ও শাকসবজিতে ভরে ওঠা ফসলি ক্ষেতও পরিদর্শন করেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত হন এবং দুর্যোগকালে ব্যবহারের একটি সাইক্লোন শেল্টারও পরিদর্শন করেন। গ্রামীণ নারীরা তাকে পেয়ে অত্যন্ত খুশী হন। তারা দুর্যোগের সময় কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তার বর্ণনা ও সুপেয় পানি সঙ্কটের কথা প্রিন্সেসকে জানান।

৩০ মিনিট কাল কুলতলি গ্রাম পরিদর্শন শেষে প্রিন্সেস ম্যারি তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে চলে আসেন মুন্সিগঞ্জের বরসা রিসোর্টে। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। পরে মুন্সিগঞ্জ নদীর ঘাটের পন্টুন থেকে স্পিডবোটে রাজকুমারী ম্যারিকে নিয়ে যাওয়া হয় কলাগাছিয়ায় ফরেস্ট টহল ক্যাম্প চত্ত্বরে। যেখানে প্রায়ই বাঘ আসে পুকুরের মিষ্টি পানি খাওয়ার জন্য। সেখানে রয়েছে বাঘের পায়ের ছাপ। এমনকি মৃত বাঘের কবরও। এসবই তিনি সচক্ষে দেখেন। কলাগাছিয়ায় যাতায়াতের পথে সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে তিনি অভিভূত হন।

এর আগে তিনি দাতিনাখালিতে একটি বেড়িবাঁধ ভাঙন ও তার নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে তার সফরকালে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সাংবাদিক এমনকি আশপাশের গ্রামবাসীও প্রবেশ করতে পারেননি। প্রিন্সেস ম্যারি তার কয়েক ঘণ্টার সুন্দরবন সফর শেষে বিকেলে হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে যান।

Print Friendly

Related Posts