পালিয়ে মালদ্বীপ, সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে লঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট

তীব্র বিক্ষোভের মুখে কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পর সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপ পালিয়ে গেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।

মালদ্বীপের সূত্রগুলো ডেইলি মিররকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বুধবার সকালে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। মালদ্বীপে রাজপাকসে পৌঁছানোর পর সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর তিনি সিঙ্গাপুর উড়াল দিলেন। রাজাপাকসের স্ত্রী ও তার দুজন দেহরক্ষীও সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। এর আগে রাজাপাকসে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার জন্যে আবেদন করলেও তা তিনি পাননি। এপরই মালদ্বীপ রওনা দেন তিনি।

এদিকে রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ৩৭.১ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিয়োগ করেছেন বলে বুধবার দেশটির স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। তিনি এক বিশেষ বাণীতে বলেন, রাষ্ট্রপতি তাকে অবহিত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে দূরে থাকায় তাকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তার দেশ ছাড়ার খবরে সকাল থেকেই কলোম্বো-সহ শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখল করে তাণ্ডব চালাতে থাকেন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা।

জরুরী অবস্থা ও কারফিউ ঘোষণা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গেট ভেঙে ঢুকে পড়েছেন এবং সেখানে অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখন বিক্ষোভকারীর দখলে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা বিজয়ের উল্লাস করছেন, জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। অনেক বিক্ষোভকারীকে প্রধানমন্ত্রীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনন্দে চিৎকার করতে দেখা গেছে।

এর আগে হাজার হাজার উত্তেজিত বিক্ষোভকারী দেশটির রাজধানী কলোম্বোতে কারফিউ উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে পুরো এলাকা। নিরাপদে আশ্রয় নেবার জন্য মানুষজনকে দৌড়াতে দেখা গেছে। এসব ঘটনা ঘটছে যখন শ্রীলংকার বিরোধীদলগুলো একটি নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করেছে।

কয়েক মাস ধরে দেশটিতে ভয়াবহ জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও ঔষধ সংকট চলছে। দেশটির ইতিহাসের সবচাইতে বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য সেখানকার জনগণ রাজাপাকসে পরিবার ও তাদের অধীনে পরিচালিত প্রশাসনকে দায়ী করে আসছে। সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি।

যেভাবে মালদ্বীপ পালালেন: মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে তিনি মালদ্বীপ গেছেন বলে জানিয়েছেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। সূত্র : ডেইলি মিরর, এনডিটিভি

মালদ্বীপে অবতরণের পর কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার আশপাশে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছে।

বুধবার (১৩ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোরে মালের ভেলেনা বিমানবন্দরে পৌঁছায় গোতাবায়াকে বহনকারী সামরিক বিমান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও দুই নিরাপত্তা প্রহরী। কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে রওনা দেয় সামরিক বিমানটি।

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে সামরিক বিমান দেওয়ার অনুরোধ করেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। কর্মকর্তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ায় তাকে তা প্রদানে বাধ্য ছিলেন কর্মকর্তারা।

মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর গোতাবায়া, তার স্ত্রী ও দুই দেহরক্ষীকে গোপনস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে পালিয়ে যেতে ভারত সহায়তা করেছে বলে ওঠা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার ভারতীয় দূতাবাস। এক বিবৃতিতে তারা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছে, তারা শ্রীলঙ্কার জনগনকে সমর্থন করা অব্যাহত রাখবে।

এর আগে সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয়ে থেকে বিমানবন্দরে গিয়ে আরব আমিরাতে পাড়ি জমাতে দফায় দফায় চেষ্টা চালান গোতাবায়ে, কিন্তু অভিবাসন কর্মকর্তাদের বাধার মুখে সেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts