স্বাগত ১৪৪৪ হিজরি

এলো হিজরি সনের নতুন বছর। বাংলাদেশের আকাশে শনিবার ১৪৪৪ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ রোববার থেকে মহররম মাসের গণনা শুরু হয়েছে। আজ পয়লা মহররম।

মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাসটি এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যে স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

হিজরি সনের প্রথম মাস মহরম। এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। মুহররম মাস শুধুমাত্র কারবালার ঘটনা স্মরণ করার মাসই নয়, এ মাস গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার, ত্যাগের, ভালো কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে গড়ার প্রতিজ্ঞা করার মাস। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ মাসে রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় ও পালনীয় বিষয়।

১৪৪৩ হিজরি সনকে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো নতুন হিজরি বর্ষের পথচলা। স্বাগত, হিজরি নববর্ষ ১৪৪৪।

বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও আরবি নববর্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। যদিও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অনেক। ইসলামের বিধিবিধান হিজরি সন ও চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে হিজরি বছরের শেষ মাস এবং শুরুর মাস অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের মাস। শুরুর মাস মহররমের ১০ তারিখেই পালিত হয় পবিত্র আশুরা। এবারের পবিত্র আশুরা পালিত হবে ১০ সেপ্টেম্বর।

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর হিজরতের বছরকে ইসলামি সন গণনার প্রথম বছর ধরা হয়েছে বলে এটি হিজরি সন নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতের সময় ভূখণ্ড ইসলামি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহাসিক আলবিরুনির বর্ণনায়, হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) একটি পত্রে উমর (রা.)–কে জানান, আপনি আমাদের কাছে যেসব চিঠি পাঠাচ্ছেন, সেগুলোতে সন–তারিখের উল্লেখ নেই, এতে আমাদের অসুবিধা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা উমর (রা.) একটি সন চালুর ব্যাপারে সচেষ্ট হন।

আল্লামা শিবলি নোমানি (র.) সুপ্রসিদ্ধ আল ফারুক গ্রন্থে উল্লেখ করেন: হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনের শাবান মাসে খলিফার কাছে একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়, পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল; সনের উল্লেখ ছিল না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, পরবর্তী কোনো সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছিল? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা মুতাবিক ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হজরত আলী (রা.)। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন হজরত উসমান (রা.)। (বুখারি ও আবু দাউদ) ।

হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে সম্পৃক্ত মুসলিম উম্মাহর জীবনাচরণ। এছাড়াও রাসূল (সাঃ)-এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনাবলী যেমন- বদর, খন্দক, তাবুক, প্রভৃতি যুদ্ধ, রাজ্যজয় এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলি হিজরি সনের সাথে সম্পৃক্ত। সম্পৃক্ত ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানও। যেমন- রোজা, হজ্ব, ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, শবে মিরাজসহ ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠান। হাদীসে এসেছে, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙ্গা। (মুসলিম, ১/৩৪৭)

তাই একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য হলো তার সকল কাজ কর্ম হিজরি সনের তারিখ অনুযায়ী সম্পন্ন করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, লোকেরা আপনাকে নব চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, তা হলো মানুষের এবং হজ্বের জন্যে সময় নির্ধারণকারী। (সূরা: বাকারা, ১৮৯)।

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের হিসাব নিকাশের সুবিধার্থে চাঁদকে পঞ্জিকাস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন।

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহর নিকট গণনার মাস বারোটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। কাজেই-এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)

এ চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে নবী করীম (সা.) বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম এবং অপরটি হলো রজব। (তাফসীর ইবনে কাসির)।

শরিয়তের আহকামের ক্ষেত্রে চান্দ্র মাসই নির্ভরযোগ্য। চান্দ্র মাসের হিসাব মতেই রোজা, হজ ও জাকাত প্রভৃতি আদায় করতে হয়। তবে আল্লাহপাক কুরআন মজিদে চন্দ্রকে যেমন, তেমনি সূর্যকেও সাল তারিখ ঠিক করার মানদন্ডরূপে অভিহিত করেছেন।

Print Friendly

Related Posts