সাজানো প্যারাবনের অপূর্ব লীলাভূমি ‘মহেশখালী’

রেজাউল করিম: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এযেন জল, বৃক্ষ আর মৃত্তিকার অপূর্ব মেলবন্ধন। স্পিডবোট বা ট্রলারে চড়ে বঙ্গোপসাগর আর বাঁকখালী চ্যানেলের পথটি নতুন এক জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। জলতরঙ্গ আর সবুজ বেষ্টিত পাহাড়ের হাতছানিতে মহেশখালী দ্বীপে যেতে যেতে রোমাঞ্চিত হন পর্যটক।

দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। টেকনাফ থেকে সিলেট পর্যন্ত দেশের পূর্বাঞ্চলে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহের অবিচ্ছেদ্য অংশই দ্বীপ মহেশখালী। এখানে রয়েছে মুসলিম, হিন্দু ও রাখাইন সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সংমিশ্রণ। জোয়ার ভাটার তরঙ্গ আর সারি সারি সাজানো প্যারাবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি এই মহেশখালী। এখানে রয়েছে অনেক মনকাড়া দর্শনীয় স্থান।

আদিনাথ মন্দির:

সাগরবেষ্টিত মহেশখালী দ্বীপের অন্যতম দর্শনীয় স্থান আদিনাথ মন্দির। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ ফুট উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরটির অবস্থান। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ১০.৮৭ মিটার, প্রস্থ ৮.৬২ মিটার, উচ্চতা ৫.৯৩ মিটার। পাহাড়ের ঢাল কেটে বানানো ৬৯টি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় মন্দিরে।

বৌদ্ধবিহার:

মহেশখালী দ্বীপের ডকইয়ার্ডের কাছেই গরকঘাটার বড় রাখাইনপাড়ায় রয়েছে বৌদ্ধবিহার। বৌদ্ধবিহারের সীমানার ভেতর তাম্র দিয়ে নির্মিত একই ধরনের দুইটি প্যাগোডা এবং কয়েকটি ভবন রয়েছে। এছাড়া বৌদ্ধবিহারের সীমানার অভ্যন্তরে বেশকয়েকটি বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে যেগুলোর মধ্যে একটি বিশালাকারের এবং তামা দিয়ে নির্মিত। মহেশখালী দ্বীপে বসবাসকারি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজন (মূলত রাখাইন সম্প্রদায়ের) এই বৌদ্ধ বিহারে প্রার্থণা করতে আসেন।

মৈনাক পাহাড় ও বিখ্যাত পান:

মৈনাক পাহাড় থেকে ম্যানগ্রোভ বন, সমুদ্র এবং পুরো মহেশখালী দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ের ঢালে পানের চাষ দেখা যায়। আর মহেশখালী ১ নং জেটি ঘাট থেকে এখানকার বিখ্যাত মিস্টি পান মুখে দিয়ে মনের অজান্তেই গেয়ে উঠবেন শিল্পী শেফালী ঘোষের সেই বিখ্যাত গান ‘যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানায় খাওয়াইতাম।’

যেভাবে মহেশখালী:

মূলত চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মহেশখালী উপজেলার বৃহত্তর দ্বীপ, বাকি তিনটি দ্বীপ হল সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা। এই দ্বীপের দর্শনীয় স্থান হচ্ছে, আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপ, বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন পাডা, স্বর্ণ মন্দির, মৈনাক পর্বত, শুঁটকি পল্লী, লবণের মাঠ ও জেটি ঘাট।

জীবিকা ও অর্থনীতি:

দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র। পান, মাছ, শুঁটকি, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদন এই উপজেলাটিকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। এখানকার মানুষের জীবিকা ও অর্থনীতি এগুলোর উপর নির্ভরশীল।

যাওয়ার উপায়:

কক্সবাজার থেকে বাহার ছড়া ঘাটে যেতে হবে। কক্সবাজারের যেকোনো যায়গা থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় উঠে বলবেন ৬ নং জেটি ঘাট যাবো। ৬ নং জেটি ঘাট আসার স্পিডবোট বা ট্রলার ভাড়া করে যেতে পারবেন মহেশখালী ১ নং জেটি ঘাট। স্পিডবোটে সময় লাগবে ২০ মিনিট আর ট্রলার বা সেলুনৌকায় সময় লাগবে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। এরপর আদিনাথ জেটিতে নেমে হেঁটে অথবা সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপে।

সড়ক পথে মহেশখালী:
সড়ক পথেও মহেশখালী দ্বীপে যাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে চকোরিয়া হয়ে বদরখালী সেতু পেরিয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে মহেশখালী।

থাকার ব্যবস্থা:
মহেশখালীতে থাকার জন্য ভালো মানের তেমন কোন হোটেল নেই। যেহেতু পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে ডে ট্রিপে মহেশখালী ভ্রমণে গিয়ে থাকেন, তাই এই দ্বীপে এখনও সেভাবে থাকার হোটেল বা রিসোর্ট গড়ে উঠেনি। তবে সামুদ্রিক তরতাজা মাছ খাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts