চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: বরেন্দ্রভূমিতে নতুন জাতের একটি আমের সন্ধান পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদরা। বরেন্দ্র অঞ্চলের জৈটাবটতলা এলাকার দিঘা গ্রামে হাসমত আলীর বাগানে আমটির খোঁজ পাওয়া যায়।
হাসমত আলীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কল্যাণপুরে।
জানা গেছে, এ নতুন জাতের আমটি দেরিতে পাকে আর খেতেও ক্ষিরশাপাত (হিমসাগর) আমের মতোই। তাই স্থানীয়দের কাছে লেট ক্ষিরশাপাত নামে পরিচিত। সরকারিভাবে আমটির নামকরণ করা হয়নি। তবে হর্টিকালচারের উদ্যানতত্ত্ববিদরা ‘কল্যাণ ভোগ’ নাম রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি- অসময়ে ক্ষিরাশাপাত আমের চাহিদা মেটাবে এ নতুন জাতের আমটি।
নাবি জাতের এ আমটি গত ৪ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন হার্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহিন সালেহউদ্দিন। তার ভাষ্যমতে- ‘এ আমের গাছের ডাল-পাতা ঘন। গাছটি প্রায়ই ক্ষিরশাপাত আম গাছের মতো দেখতে। মাঘ-ফাল্গুন মাসের মধ্যে মুকুল আসে। আমের খোসা মাঝারী মসৃণ। আমটি পাকলে বোটার দিকে লালচে বর্ণের হয়। আঁটি পাতলা, আঁশও নেই।’
তিনি আরও বলেন; ‘এ আমের সর্বোচ্চ ওজন এক কেজিরও বেশি হয়, আর সর্বনিম্ন প্রায় ৪০০ গ্রাম। এ আমের মিষ্টতার পরিমাণ (টিএসএস) প্রায় ২৪ শতাংশ। ৩-৪ বছর বয়সী গাছে বছরে প্রায় ২০ কেজি আম উৎপাদন হবে। গাছের বয়সের সাথে আমের ফলনও বাড়বে। একটি ভালো জাতের আমে যা বৈশিষ্ট থাকা দরকার এ আমে সব আছে।’
শাহিন আলী এ বাগানের মালি। তিনি বছর তিনেক ধরে এ বাগান দেখভালের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘সাধারনত অন্যান্য আমের মুকলের সময় এ গাছেরও মুকুল দেখা দেয়। মুকুল আসার ৫ থেকে ৬ মাস পর আম পাকতে দেখা যায়। আমটির বোটা শক্ত। খেতে খুব সুস্বাদু।’
ওই বাগানরই আরেক মালি আনারুল ইসলাম। এ বাগানের শুরু থেকেই কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘এ নতুন জাতের আমের গাছটি ভারত থেকে আনা হয়েছে। ক্ষিরশাপাত আম গাছের সাথে এ গাছটির প্রায় মিল আছে। আমের ফলন ভালো, খেতে খুব মিষ্টি। নতুন জাতের আমটি যারা চাষাবাদ করবে তারা সফল হবে।’
বৃক্ষপ্রেমি আব্দুর সবুর সুজন বলেন, ‘আমটি নতুন জাতের, স্বাদও ক্ষিরশাপাতের মতো। এ আম যেহেতু দেরিতে (বিলম্ব) পাকে তাই লেট ক্ষিরশাপাত নামে আঞ্চলিকভাবে ডাকি। আমটির আকার আকৃতি অন্যান্য আমের চেয়ে বড়, গোলাকার। এ আমে রোগ বালাই খুব কম। আমটির স্বাদ গন্ধ অতুলনীয়।’
৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আমের বাগান করছেন হাসমত আলী (বাবু)। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর পূর্বে আমার ভাই মাইনুল ইসলামের এক বন্ধু ভারতে এ আম খেয়ে মুগ্ধ হয়। ভাইয়ের বন্ধু ওই গাছের সায়ন (চারা তৈরির উপযোগী ডগা) সংগ্রহ করে দেশে আনেন। ওই সায়ন দিয়ে একটি কলম বাঁধা হয়। এ আমের চাষাবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছি। বাগানে এখন প্রায় ৩০টি গাছ আছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন জাতের আমটি এখনও বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয়নি। বাগানের আম বাগানে বেঁচে শেষ হয়ে যায়। এ বছরে প্রায় পাঁচশ টাকা কেজি করে প্রায় ১০ হাজার টাকার এ আম বিক্রি করেছি। এ নতুন জাতের আম গাছের চারা নেওয়ার জন্য অর্ডার দিলে, চারা বিক্রি করা হয়। প্রতিটি চারার মূল্য ১ হাজার টাকা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচারের উপপরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘আমটি স্বাদগুণে ক্ষিরশাপাত আমের সাথে তুলনা করা যায়। বলা চলে অসময়ের ক্ষিরশাপাত আম। দেরিতে পাকে তাই স্থানীয়রা আমটিকে লেট ক্ষিরশাপাত নামে ডাকেন।’
বিমল আরও বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আমটির ‘কল্যাণ ভোগ’ নাম রাখার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। শিগগির এ আমের নতুন নামকরণ করা হবে।’