বিজয় ধর: পাহাড়ে বিলাতি ধনিয়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এই ফসলটির চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বিলাতি ধনিয়া হচ্ছে পাহাড়ের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিলাতি ধনিয়া সুগন্ধিযুক্ত উচ্চপুষ্টি ও ভেষজ গুণসম্পন্ন হওয়ার কারণে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও সারাদেশে এর চাহিদা প্রচুর। বিলাতি ধনিয়ার মধ্যে বারি বিলাতি ধনিয়া-১ একটি উন্নত জাত। সব ধরনের মাটিতে বিলাতি ধনিয়ার চাষ করা যায়।
রাঙামাটি কৃষি অফিস জানিয়েছে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিলাতি ধনিয়ার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বিলাতি ধনিয়া আলো-ছায়ায় ভালো উৎপাদন হয়। পাহাড়ের অনেক চাষি বিলাতি ধনিয়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিলাতি ধনিয়া চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের কিছু কারিগরী পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
বিশেষ করে বীজতলায় যখন বীজ বপন করা হয়- কৃষকরা যাতে তার উপর সঠিকভাবে মাচা দেয় সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মাচার উপরে কুমড়া জাতীয় ফসল চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ধনিয়া কিভাবে প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করতে পারে- সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ত্রিপুরাছড়া এলাকার ধনিয়া চাষি রাঙাবি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এবার ধনিয়া চাষের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম ভালো পাওয়া গেলে লাভ করতে পারব, না হয় লোকসান হবে।
আরেক পাহাড়ী নারী চাষি শ্যামলী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ধনিয়া পাতা চাষ করে আমাদের সংসার চলে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে প্রণোদনা পেলে আমাদের আরো ভালো হতো, ধনিয়া চাষ করে আরো বেশি করে লাভ করতে পারতাম।
রাঙামাটি ও কাপ্তাইয়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা প্রতি কেজি ধনিয়া পাতা পাইকারি বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা করে। অপরদিকে, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০-১০০ টাকা।
সাপছড়ির ধন রতন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ধনিয়া পাতার বীজটির অনেক দাম। ধনিয়ার বীজ আমাদের কিনতে হয় ১৮শ টাকা করে। আবার অনেক সময় ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যায়। ধনিয়া পাতা যখন প্রথম বাজারে আসবে তখন একটু দাম বেশি থাকে। তিনি বলেন, এখন সার থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়েছে।
ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ধনিয়া পাতা চাষি আপন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ধনিয়া পাতা আমরা জমি থেকে তিনটি ধাপে উত্তোলন করে থাকি। বাজারে যদি ভাল দাম পাই, তাহলে আমরা লাভ করতে পারি। আশা করছি আমরা এবার ধনিয়া পাতা বিক্রি করে লাভ করতে পারবো।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, এবার রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া চাষ হয়েছে। বিলাতি ধনিয়ার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩ মেট্রিক টন। এতে মোট ৬৫০ মেট্রিক টন বিলাতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিলাতি ধনিয়া সংগ্রহ শুরু হয়েছে। অনেকদিন ধরে এর সংগ্রহের কাজ চলে। আশা করছি ৬৫০ মে.টন ফল পাওয়া যাবে।
উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল আরো বলেন, রাঙামাটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধনিয়া চাষ হয় কাপ্তাই ও কাউখালী উপজেলায়।