শাহ মতিন টিপু
তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার এক অনন্য কবি। কাব্য রচনায় সৃষ্টিশীলতা ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনার জন্য তাকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র। কবিতার ভাষা তার পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার ও বাঙালির স্বাধীনতার। নাগরিক এই কবি আমৃত্যু ছিলেন স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ।
তাইতো শামসুর রাহমান বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। জনতার কবি। স্বাধীনতার কবি। কবির ৯৪তম জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর তিলোত্তমা শহর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মেছিলেন এই কবি। বর্ণময় জীবনের বড় অংশজুড়েই কবিতা সৃজনে নিমগ্ন থেকেছেন তিনি। পুরনো ঢাকায় বেড়ে ওঠায় নগর জীবনের নানা অনুষঙ্গ ও প্রকরণ উদ্ভাসিত হয়েছে তার কবিতায়। এজন্য তাকে নাগরিক কবিও বলা হয় ।
দেশের ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, কোন অনাচার হতে দেখলে নিজেকে একাত্ম করে নিতেন এবং তার জবাব দিতেন কবিতার ভাষায়।
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর ৭ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি দুর্বৃত্ত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন কবি। রাজধানীর শ্যামলীর বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। কবির ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, নিজ মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
শামসুর রাহমানের কবিতায় বাঙালিজাতির স্বাধীনতার চেতনার দীপ্তস্বর উচ্চারিত। তিনি লিখেছেন-
স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। /স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-/স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা/স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল। (স্বাধীনতা তুমি)
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,/তোমাকে পাওয়ার জন্যে/আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?/আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? (তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা)
কবিতা রচনায় এভাবেই স্বাধীনতার কণ্ঠকে ধারণ করেন শামসুর রাহমান। লিখেছেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’র মতো কবিতা। যা আজও সকল বয়সের মানুষকে উজ্জীবিত করে। এ কারণেই তিনি স্বাধীনতার কবি।
প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এর পর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া শিশুতোষ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখন্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।
সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশের পদক, কলকাতা থেকে আনন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।