সাতছড়ি উদ্যানে বেড়াতে আসাদের হোটেল

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। চারদিক সবুজ আর সবুজ। এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক। সবুজ বেষ্টনী এই সড়কের একপাশে টিন ও বাঁশের তৈরি একটি ঘর। এ ঘরেই তৈরি হচ্ছে খাবার।

দুপুর হতে না হতেই এখানে স্থানীয় ও উদ্যানে বেড়াতে আসা মানুষদের সমাগম। কারণ, এখানের রান্না করা খাবার। কেউ বলেন, ‘বাড়ির খাবারের চেয়েও স্বাদ, তাই এত ভিড়। যথাসময়ে না এলে খাবার মিলে না।’

এখানে আগে কোন খাবার হোটেল ছিল না। বেড়াতে আসা পর্যটকদের কথা ভেবে হোটেলটি গড়ে তোলেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান জামে মসজিদ ইমাম মোঃ আব্দুল কাইয়ূম আরজু মিয়া। নাম দিয়েছেন ‘মোস্তাক হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’। নাম যা-ই হোক সবাই বলে ‘আরজু চাচার হোটেল’। উদ্যানে আসা পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় উঠেছে এ হোটেলের খাবার।

উদ্যানে বেড়াতে আসা হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গাজীউর রহমান বলেন- ‘এ হোটেলের খাবার তৃপ্তিভরে খেলাম। ঘ্রাণ ও রান্না মিলিয়ে তরকারির মজাটাই আলাদা। খেতেই ইচ্ছে করে। না খেলে বুঝা যাবে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বেড়াতে আসা নোমান আহমেদ, আসমা, পাপিয়া, সুজনও এমন কথাই বললেন। সুমন পাঠান এসেছেন ঢাকা থেকে। সাইফুল এসেছেন সিলেট থেকে। তারা বলেন, ‘আরজু চাচার হোটেলের খাবারের স্বাদই আলাদা। এখানে খাবার খাওয়ার জন্য, সময় নিয়ে আবার আসতে হবে।’

পরিদর্শনকালে জানা যায়, প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে এ উদ্যানে পদচারণা হচ্ছে শত শত পর্যটকের। উদ্যানে হাতেগোনা কয়েকটি দোকান রয়েছে। এর ভাতের হোটেল মাত্র একটি। এ হোটেলের মালিক আরজু মিয়াকে প্রায় সকলেই ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন।

আরজু মিয়া জানান, তার হোটেলে দেশীয় মোরগই পর্যটকদের প্রথম পছন্দ। এরপর রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। এখানে কম মূল্যের খাবার হচ্ছে, ডিম ও ডাল-ভাত। সঙ্গে উদ্যানের চাষ হওয়া বিষমুক্ত লেবু, কাঁচা মরিচ আর নানা ধরনের সবজির তরকারি। তার হোটেলের মেন্যু একেবারেই সাদামাটা। যাকে বলা যায়, ঘরোয়া খাবার। শুধু পরিবেশটাই আলাদা। বনের মধ্যে ভোজন- সেই বনভোজনেরই মতো।

আরজু মিয়া জানান, ইমামতির পাশাপাশি সেবার উদ্দেশ্যে হোটেল দিয়েছেন। পর্যটকরা খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছে। এতেই তিনি ধন্য। উদ্যানে রয়েছে নানা প্রজাতির পশু-পাখিসহ গাছপালা। এ দৃশ্য অবলোকন করে পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছে। উদ্যানের আসা অনেক পর্যটক এ হোটেলের আতিথেয়তা নিচ্ছেন- এতেই মুগ্ধ তিনি।

উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আরজু চাচার হোটেলের খাবারের সুনাম রয়েছে। অনেক সময় আমরাও তার হোটেলে খেয়ে থাকি। তিনি পরিছন্নভাবে খাবার তৈরি করেন বলেই পর্যটকদের কাছে তার হোটেল প্রিয় হয়ে উঠেছে।’

সাতছড়ি উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘খেতে কি স্বাদ। বলা যাবে না। খেতে হবে। তার হোটেলের খাবার সবার মত আমারও প্রিয়।’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts