দুর্দান্ত খেলেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ, মোস্তাফিজের মেডেন টার্নিং পয়েন্ট

এক ম্যাচ হাতে রেখেই ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারালো বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে সবশেষ সিরিজেও টানা জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। ৭ বছর পরও সেই ছন্দে টিম টাইগার্স। বুধবার মিরপুরে রোহিত শর্মার দলকে ৫ রানে হারায় বাংলাদেশ। ফিল্ডিং করার সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ভারত অধিনায়ক ৯ নম্বরে নেমে ঝড়ল তুললেও মোস্তাফিজুর রহমান শেষ বল ডট করে জেতান বাংলাদেশকে।

শেষ ২ ওভারে ৪০ রানের সমীকরণ রোহিত মিলিয়ে ফেলছিলেন আরেকটু হলে। ম্যাচের উত্তেজনা জমিয়ে রাখেন শেষ বল পর্যন্ত। শেষ বলে দরকার ছিল ৬ রান। ২৭ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকা রোহিত মোস্তাফিজুর রহমানের দারুণ ইয়র্কারে রান নিতে পারেননি।

বাংলাদেশ: ২৭১/৭ (৫০ ওভার), ভারত: ২৬৬/৯ (৫০ ওভার)

শেষ ৩ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪০ রানই। মোস্তাফিজ একের পর কাটার মেরে মেডেন ওভার করলে আরও কঠিন হয় ভারতের পথ। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ওভারে ২০ রান তুলে আবার খেলা জমান রোহিত। ওই ওভারে ইবাদত হোসেন ও এনামুল হক বিজয় ক্যাচ ছাড়েন রোহিতের।

জীবন পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ভারত ক্যাপ্টেন। প্রায় প্রতি বলেই মারতে থাকেন বাউন্ডারি। ৫ বল থেকে ১৪ রান তুললেও ফিজের শেষ ডেলিভারিতে কাবু হন। তাতেই সিরিজ নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।

রোমাঞ্চকর উত্তেজনার পর আসা জয়ের উদযাপন ছিল বাধনহারা। শনিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। মিরপুরেই সিরিজ নিষ্পত্তি করে বন্দরনগরীতে যাচ্ছে সাকিব-লিটনরা। তাদের সামনে ভারতকে হোয়াইটওয়াশের সুযোগ

বাংলাদেশের দেয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ভারত গুটিয়ে যেতে পারত আড়াইশ’র আগেই। সাত উইকেট পড়ার পর চোটের কারণে হাসপাতাল ঘুরে আসা রোহিত সবাইকে অবাক করে নামেন ব্যাটিংয়ে। মোস্তাফিজ শেষ ওভারে ২০ রান ডিফেন্ড করতে না পারলে ক্যাচ মিস পোড়াত টাইগারদের।

আগের ম্যাচের মতোই মেহেদী হাসান মিরাজ বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়ক। তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে লড়াকু পুঁজি পায় স্বাগকিরা। পরে শুরু থেকেই ভারতকে চেপে ধরলেও শ্রেয়াস আয়ার ও আক্সার প্যাটেলের মধ্যে গড়ে ওঠা শতরানের পঞ্চম উইকেট জুটিতে জমে ওঠে ম্যাচ। দুজনই বিদায় নেন পর পর। ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজই। আয়ার ৮২, আক্সার ৫৬ রান করেন। তাদের বিদায়ের পর মনে হচ্ছিল একপেশে ম্যাচই হতে যাচ্ছে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। তবে রোহিত নেমে সব হিসেব পাল্টে দেন। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর জিতে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ, সঙ্গে সিরিজও।

ইবাদত তিনটি, মিরাজ ও সাকিব নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ ও মাহমুদউল্লাহ।

খাদের কিনারা থেকে আজও দলকে টেনে উদ্ধার করেন মিরাজ। তুলে নিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তাও মাত্র ৮৩ বলে। বুক চিতিয়ে লড়াই করেন মাহমুদউল্লাহ। সপ্তম উইকেট জুটির সেঞ্চুরির ভেলায় ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পায় ২৭১ রানের লড়াকু সংগ্রহ।

মিরপুরে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর লড়াইয়ে আড়াইশ পেরিয়ে যায় টিম টাইগার্স। নাসুম আহমেদের ১১ বলে ১৮ রানের ক্যামিওতে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৭১।

শেষ ৫ ওভারে ৬৮ রান তোলে বাংলাদেশ। ৭৭ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। ৯৬ বলের ইনিংসে চার মারেন সাতটি। মিরাজ শেষ পর্যন্ত লড়ে যান। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন। অসাধারণ সব শটে মাতিয়ে রাখেন শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি।

আগের সর্বোচ্চ (ওয়ানডে ক্যারিয়ারে) ৮১ পেরিয়ে খেলেন ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস। আটটি চারের পাশাপাশি মারেন দুটি ছক্কা।

২ উইকেট হারিয়ে পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়ার পর বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ১৭ রানের ব্যবধানে হারায় ৪ উইকেট। তাতে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জাগে। তবে আগের ম্যাচের মতোই অদম্য মিরাজের ব্যাট ম্যাজিকাল সমাপ্তি এনে দেয়। মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ যোগ করেন ১৪৮ রান। যা ভারতের বিপক্ষে যে কোনো উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ। সপ্তম উইকেট জুটিতে ২৩ বলে যোগ হয় ৫৪ রান।

ম্যাচ শেষে মিরাজ জানান ক্যাচ ছাড়ার পরও দলের খেলোয়াড়দের মাঝে ছিল জয়ের বিশ্বাস, ‘দেখেন, ক্যাচ মিস তো হতেই পারে। এটা খেলারই অংশ। ক্যাচ মিসের পরও ওই বিশ্বাস ছিল কেউ একজন আউট হলেই হবে। মোস্তাফিজ একটা ওভার দারুণ করেছে। মেডেন নিয়েছে। ওটা কৃতিত্ব দিতে হবে। দলের জন্য টার্নিং পয়েন্ট ওই ওভারটা।’

Print Friendly

Related Posts