ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, শিশুতোষ কাহিনি এবং গবেষণাধর্মী মিলিয়ে দু’পার বাংলা থেকে এর আগেই প্রকাশিত হয়েছিল ২৯৯টি বই।
এ বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় সিদ্ধার্থ সিংহের যে ১৪টি বই বেরোবার মুখে, তা়র প্রথম বই, ‘টুম্পার উপাখ্যান’ উপন্যাসটি কলকাতার এন. ই. পাবলিশার্স থেকে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধার্থ সিংহের বইয়ের সংখ্যা স্পর্শ করল ৩০০-র শীর্ষবিন্দু।
তিনি যে রিয়্যালিটি উপন্যাসের সূচনা করেছিলেন ‘লাস্যময়ীর ছোবল’ এবং ‘নামগোত্রহীন’-এর মাধ্যমে, যার জন্য বারবার প্রাণনাশের হুমকি এসেছিল প্রকাশকের কাছে, আক্রান্ত হয়েছিলেন লেখক, সেই ঘরানাতেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুর অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে লেখা এক অদ্ভুত জগতের কথা— টুম্পার উপাখ্যান।
নিজস্ব বই ছাড়াও সিদ্ধার্থ সিংহের সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যাও নিহাত কম নয়। লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভঙ্কর সিংহ, মধুবন চক্রবর্তীদের সঙ্গে যৌথ এবং একক ভাবে সাড়ে ছ’শোর ওপর ঢাউস ঢাউস সংকলন সম্পাদনা করেছেন তিনি, বানিয়েছেন দু’টি তথ্যচিত্র। অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন ভাষা থেকে। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে সরাসরি উর্দু থেকে বাংলায় তাঁর ভাষান্তর-সাদত হাসান মান্টো। লিখেছেন বেশ কয়েকটি ছায়াছবির চিত্রনাট্য। ‘রতিছন্দ’ নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন। প্রবর্তন করেছেন ‘ঝলক-গল্প’র। চারশোটি ঝলক-গল্প নিয়ে এবার কলকাতা বইমেলাতেই বেরোচ্ছে-প্রতি গল্প আট আনা। যেগুলো নিয়ে ইতিমধ্যেই তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম, কন্নর, হিন্দি এবং বাংলা ভাষায় তৈরি হয়েছে স্পর্ক ফিল্ম।
সিদ্ধার্থের বেশির ভাগই লেখাই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব।
বেশ কয়েক বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া এই মুষ্টিযোদ্ধা এক সময় আনন্দবাজার সংস্থায় নিয়মিত মডেলিংয়ের কাজও করেছেন।
আশির দশকের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই সব্যসাচীর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ আইসিএসসি এবং সিবিএসসি বোর্ডে।
তিনি বিশ্ববঙ্গ টিভির সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক। আমেরিকার ‘উড়ালপুল’ পত্রিকার কলকাতার সম্পাদক। তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর শ্রুতিনাটক নিয়মিত করেন জগন্নাথ বসু থেকে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়রা। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখের মধ্যে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, মুক্তগদ্য, প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট তিনশো এগারোটি লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখে ‘এক মাসে সর্বাধিক লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড’ অর্জন করেছেন তিনি।
২০২০ সালে ‘সাহিত্য সম্রাট’ উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে ‘বঙ্গ শিরোমণি’ সম্মানে ভূষিত। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য়। প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ। প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার।
এ দিন তাঁর লেখা ৩০০তম বই প্রকাশের সাক্ষী রইল কলেজ স্ট্রিটের বাংলাদেশ দশম বইমেলা।