দেশে দেশে বিশ্বমানচিত্রে ll শিউল মনজুর এর কবিতা

ব্যাঙ্কার থেকে বেরিয়ে অসুস্থ মায়ের জন্য অষুধ আনবে বলে

বেরিয়েছিলো যে কিশোর, সে আর ফিরতে পারেনি মায়ের

স্নেহমাখা আলিঙ্গনে। ক্ষুধার্ত পরিবারের জন্য খাদ্য সংগ্রহের

আশা নিয়ে যে টগবগে যুবক সাইকেল চালিয়ে বেরিয়েছিলো

অসীম সাহসে, সেও ফিরতে পারেনি প্রিয়তমার চুম্বনের

নৈকট্যে। এমন কী নিরাপদ হতে পারে ভেবে থিয়েটারের

অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা ভয়ার্ত পরিবারগুলোও মিশে গেছে

মস্কোর গোলাবারুদে। আবার শিশুদের বাঁচাতে সীমান্ত

পেরিয়ে যে সব মায়েরা জন্মভূমির হাহাকার নিয়ে চলে গেছে

উদ্বাস্তু হয়ে ভিনগাঁয়ের খোলা আকাশের চরে, তারাও

মাতৃভূমি হারানোর ক্ষরণে নিদ্রাহীন কাঁদছে বুকভাঙা হৃদয়ে!

আমরা তো আরো দেখে যাচ্ছি কিয়েভ, খারকিভ, মারিওপল

কিংবা দোনেস্ক এর মতো বেদনাদায়ক দীর্ঘশ্বাসের গল্পধ্বনি

শতাব্দীযাবত রূপায়িত হচ্ছে রেঙ্গুনে, ফিলিস্তিনে এবং দেশে

দেশে বিশ্বমানচিত্রে রাজা-বাদশা কিংবা মন্ত্রী-মিনিস্টারদের

দুরূহ দুঃশাসনে পুড়ে যাচ্ছে দশদিক!

 

অথচ, চেয়ে দেখো, কেউ কেউ মস্কোর সাথে মিলিয়েছে

মারাণাস্ত্র হাত, আবার কেউ কেউ কিয়েভের দিকে বন্ধুত্বের

নিশানা উড়িয়ে যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু মানুষ হয়ে

কেউ মানুষের কথা ভাবছে না, বলছে না কেউ, থামাও

তোমাদের এমন মৃত্যু মৃত্যু ছেলেখেলা, থামাও তোমাদের

চরদখলের এমন বিনাশীউৎসব! অন্যদিকে, চেয়ে দেখো,

বন্দরে বন্দরে বিশ্ববাজারে অস্ত্রবোঝাই জাহাজ ঘুরে বেড়াচ্ছে

দিব্যি। চাল-ডাল, আটা রুটির চেয়ে অস্ত্রের মূল্যই জানি

আজ অধিক।

 

আমরা নিশ্চিত যে, শান্তির পায়রা উড়ে গেছে দূরে বহুদূরে,

মানবগ্রহ থেকে ভিনগ্রহে এবং আরো নিশ্চিত যে, বন্যপ্রাণীর

কাছেও মানবজাতি হারিয়েছে তার মূল্যবোধ! তবু, দূরদিগন্তে

তাকিয়ে আছে যুদ্ধবিরোধী বিশ্বসম্প্রদায়, আরেকজন শ্রেষ্ঠমানবের

পদচ্ছাপের অপেক্ষায়! নিশ্চয়ই তিনি আসবেন!

 

মেরীল্যান্ড, আমেরিকা।

Print Friendly

Related Posts