সিলেটের মানুষের কাছে তিনি ‘গণমানুষের কবি’

নূর আহমদ: একুশে পদকপ্রাপ্ত গণমানুষের কবি দিলওয়ারের ৮৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৭ সালের ১ জানুয়ারি তিনি সিলেট শহরের সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে ভার্থখলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদানকারী বহু কবিতা ও গানের স্রষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কবি ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কবি দিলওয়ারের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে সিলেটে কবি দিলওয়ার পরিষদ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—আজ কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, গণসংগীত এবং আবৃত্তি ইত্যাদি।

স্বাধীনচেতা ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী ছিলেন কবি দিলওয়ার। তিনি গ্রিক, রোম থেকে শুরু করে পুরাণকে তৃতীয় দৃষ্টির আলোকে প্রকাশ করেছেন তার কবিতায়। জীবনধর্মী ইতিহাসবোধের কারণে তিনি প্রাগৈতিহাসিক কালকে তার কবিতায় টেনে আনেন।

তিনি লিখেছেন, ‘সেই আদি অকৃত্রিম আকাশের নিচে/ ধূলো বালি ঘাসের ওপরে/ আমি আছি, সেই আমি জন্ম পরম্পরা থেকে/যে আমি এখন মানুষ!’

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জিজ্ঞাসা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ঐক্যতান’, ‘পূবাল হাওয়া’, ‘উদ্ভিন্ন উল্লাস’, ‘বাংলা তোমার আমার’, ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’, ‘বাংলাদেশ জন্ম না নিলে’ উল্লেখযোগ্য।

তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ ও ২০০৮ সালে একুশে পদক পান। এছাড়া তিনি লাভ করেছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পদক।

দীর্ঘ ৬০ বছরব্যাপী সাহিত্যের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে লিখে গেছেন দিলওয়ার। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এ দুটো বিষয় দিলওয়ারের বিভিন্ন লেখায় প্রকাশ পেয়েছে।

‘মা—মেঘনা সুরমা যমুনা গঙ্গা কর্ণফুলী, তোমাদের বুকে আমি নিরবধি গণমানবের তুলি’ নিজের আত্মপরিচয়কে এভাবেই তুলে ধরেছিলেন কবি দিলওয়ার। সিলেটের প্রাণ ইতিহাস—ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী লর্ড ক্বিন কর্তৃক নির্মিত ক্বিনব্রিজকে নিয়ে লিখেছিলেন ‘ক্বিন ব্রিজের সূর্যোদয়’। তার কবিতায় স্বত:স্ফূর্তভাবে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের কথা। আর এ জন্যই সিলেটের মানুষের কাছে তিনি ‘গণমানুষের কবি’।

 

Print Friendly

Related Posts