গত ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন বিশ্ব ফুটবলের সম্রাট পেলে। এরপর ভক্ত সমর্থকদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে দুই দিনব্যাপী শেষকৃত্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত পেলের মরদেহ রাখা হয়। এরপর মেমোরিয়াল নেক্রাপোল অ্যাকিউমেনিকায় যাওয়ার পথে পেলের শতবর্ষী মা সেলেস্তে আরন্তেসের বাড়ির সামনে মরদেহ রাখা হয়। সেখানে সমর্থকরা কান্নায় ভেঙে পড়লে আবেগাপ্লুত পরিবেশ তৈরি হয়।
পরে নেক্রোপোল কবরস্থানের ১৪ তলা ভবনের নবম তলায় ব্রাজিলিয়ান এই আইকনকে সমাহিত করা হয়। পেলের বাবা ডনডিনহো খেলোয়াড়ি জীবনে নয় নম্বর জার্সি পরতেন, এ কারণেই পেলের ইচ্ছায় তাকে নবম তলায় সমাহিত করা হয়। বিদায়বেলায় ফুটবলের এই মহানায়ককে লাখো ভক্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান।
বিশ্ব ফুটবলের প্রথম ‘মেগাস্টার’ ছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনবার বিশ্বকাপ জেতা এই ফুটবল সম্রাটের কারণেই ফুটবল বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়। কথিত রয়েছে যে, তার কারণেই একটি দেশের গৃহযুদ্ধ ৪৮ ঘণ্টার জন্য থেমে গিয়েছিল। এমনকি একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রথম বিশ্বকাপ জেতেন পেলে। এরপর ১৯৬২ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপেও শিরোপা জিতে অনন্য কীর্তি গড়েন তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে বিশ্বের সব ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েছিলেন পেলে। তবে নিজের প্রিয় ক্লাব সান্তোসের বাইরে খেলার কথা চিন্তাই করেননি ফুটবলের কালো মানিক।
সান্তোসের ইট-কাঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পেলের হাজারও আনন্দ-বেদনার স্মৃতি। সেখানেই শেষ যাত্রায় অনেকের সঙ্গে শামিল হয়েছিলেন দেশটির সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররাও। শেষবারের মতো প্রিয় তারকাকে বিদায় জানান দেশটির সদ্য নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। এ সময় পেলের পরিবারকে কঠিন এই সময়ে সান্ত্বনা দেন।
পেলের শোক মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা থেকে আসা সমর্থকরাও। এ সময় সান্তোসের বাড়ির ছাদ, প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি জানালায় সব চোখ শুধুই খুঁজেছে পেলেকে। হাতে দশ নম্বর জার্সি নিয়ে সবার মুখে শুধুই পেলে আর পেলে প্রতিধ্বনিতে চারপাশ মুখরিত ছিল।