হৃদয় এস সরকার: নরসিংদীতে শ্বশুর বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হওয়া তিশা সাহা (২০) নামে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ অসহ্য যন্ত্রণাভোগের পর মারা গেছেন।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিক্যালের অধীন শেখ হাসিনা বার্ন হসপিটালে টানা চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭দিন পর তিনি মারা গেলেন।
অভিযোগ উঠেছে, গৃহবধূ তিশার মৃত্যুর বিষয়ে কোনোরকম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না শর্তে মরদেহ সামনে রেখেই সামাজিক বৈঠকে মোটা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় বিষয়টির দফারফা করেছেন শ্বশুর বাড়ি লোকজন ।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার বেলা ১১ তার দিকে শহরের সেবাসংঘ দূর্গামন্দির প্রাঙ্গণে স্থানীয় কাউন্সিলর অনিল ঘোষের উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন শ্বশুবাড়ি লোকজন। বৈঠকে এ ঘটনায় আর্থিক লেনদেনর শর্তে উভয়পক্ষের মধ্যে বিষয়টির রফাদফা করা হয়। গৃহবধূর মৃতদেহ সামনে রেখে এমন বৈঠক করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে কতো টাকা আদান প্রদানে এই রফাদফা হয়েছে, তার সঠিক অঙ্ক কেউ বলতে পারেননি।
ওই বৈঠকে শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিল ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর তারাপদ সাহা ভূষণ, নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব দীপক সাহা, জেলা হিন্দু মহাজোটের সদস্য সচিব অপু সাহা, গৃহবধূর পরিবার ও শ্বশুর বাড়ি লোকজনসহ এলাকার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
বৈঠকে উপস্থিত জেলা হিন্দু মহাজোটের সদস্য সচিব অপু সাহা বলেন, উভয় পক্ষই বিষয়টি নিয়ে মিমাংসায় গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই তার পরিবারের লোকজন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এবিষয়ে দুই পরিবারের মধ্যে যেনো কোনো তিক্ততা সৃষ্টি না হয় তার জন্যই সামাজিকভাবে এই বৈঠক বসে আপোস মিমাংসা করা হয়।
তবে, টাকার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন।
কাউন্সিলর অনিল ঘোষ বলেন, এটার একটা মিমাংসা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।
নরসিংদী সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে, এম, শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনার সম্পর্কে খোঁজ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, তিশা পশ্চিমকান্দা পাড়ার সেবাসংঘ এলাকার কাজল সাহার স্ত্রী। প্রায় দুই বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে তিশা ও কাজল সাহার বিয়ে হয়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিশা জিনারদী ইউনিয়নের মুলপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাবুল সাহার মেয়ে। গত শনিবার ( ৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে শহরের পশ্চিমকান্দা পাড়ার শিয়াইল্যা পুকুর পাড় মহল্লায় তিশা অগ্নিদগ্ধ হন। পরে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কাজল সাহার বাড়িতে চিৎকার শুনতে পায় এলাকাবাসী। কিন্তু বাড়ির ভেতরের গেইট বন্ধ থাকায় কেউ ঢুকতে পারেনি। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরও ভিতর থেকে কেউ গেইট খুলেনি। প্রায় ২ ঘণ্টা পর রান্না করতে গিয়ে তিশা অগ্নিদ্বগ্ধ হয়েছে জানিয়ে তার স্বামী কাজল সাহাসহ বাড়ির অন্যান্যরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় তিশার শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে ঝলসে যাওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে সাতদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার তিশা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।