মোসলেম উদ্দিন: দিনাজপুরের বিরামপুরে চলতি শীতকালীন মৌসুমে ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ভাল দাম না পাওয়ায় হতাশ সবজি চাষিরা। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি। গো-খাদ্য হিসাবে এসব সবজি ব্যবহার করছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিরামপুর উপজেলার হাবিবপুর ও মুন্সিপাড়ার বিভিন্ন সবজির ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, বিঘার পর বিঘা চাষ হয়েছে ফুলকপি আর বাঁধাকপির। ক্ষেতেই পচে আর পোকা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফুলকপি। আবার আশপাশের অনেক গ্রামবাসী এসব ফুলকপি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন গো-খাদ্য হিসেবে।
এবার চলতি মৌসুমে প্রচুর ফলন হয়েছে ফুলকপির। তবে বাজারে সঠিক দাম পাচ্ছেন না কৃষক। বাজারে দেড় থেকে দুই টাকা পিস হিসেবে পাইকারি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষেত থেকে সবজি তুলে এবং বাজারজাত করতে পরিবহন খরচটা কোনো রকম উঠছে কিন্তু কৃষকের আসল এবং লাভের টাকা আসছে না?
সবজি চাষি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক হামিদুল ইসলাম বলেন, আমি একজন বর্গাচাষি। সারা বছর আমি সবজি চাষ করে থাকি। আমি ২০১৯ সালে সবজি চাষের উপর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। আমি কৃষির উপর নির্ভরশীল। এবার আমি শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলন অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু বাজারে কোন দাম নেই, প্রতি পিস পাইকারি দিতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই টাকায়। আমি ক্ষেত থেকে প্রতিবছর ফুলকপি ঢাকায় পাঠাই। এবার এক একটি কপি নিয়ে যেতে খরচ হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকা। আর ঢাকায় তার দাম প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকা বিক্রি। এতে করে তো আমার কোন লাভই থাকছে না।
তিনি আরও বলেন, বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমান ফুলকপির যে দাম তাতে আমার আসলের অর্ধেকও উঠবে না। ক্ষেতেই সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি এবার সবজি চাষ করে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
ফুলকপি চাষি আশরাফ আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। প্রতি বছর এসময় এই ফসলের দাম ভাল পেয়ে থাকি । এবার উল্টা, বাজারে দামই নাই। বাজারে নিয়ে গেলে আরও লস। তাই গ্রামের মানুষও তুলে নিয়ে গরু-ছাগলদের খাওয়াচ্ছে।
কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ১২ কাঠায় ফুলকপি চাষ করেছি। সার, বীজ আর তেলের যে দাম তাতে বাজারে ফুলকপির দাম নাই। এবার অনেক লোকসান গুনতে হবে।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ফিরোজ আহমেদ বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ হয়েছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় রবিশস্যর ফলন অনেক ভাল হয়েছে। আমরা রবিশস্য চাষিদের বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ করে আসছি। এছাড়াও কৃষকদের সবজি চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।