হোটেল ও রেস্তোরাঁয় স্মোকিং জোন রাখার বিধান বাতিল করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে, সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করতে হবে বলে জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটির হোটেল- রেস্তোরাঁ মালিকরা।
২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহযোগিতায় ও এডভ্যান্সমেন্ট অব হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট (আহার) বাংলাদেশ আয়োজিত শতভাগ ধূমপানমুক্ত হসপিটালিটি গঠনে হোটেল রেস্তোরাঁ মালিকদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন আহ্বান জানান বক্তারা।তারা আরও জানান, রেস্তোরাঁয় একটি স্থানে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও, সেখান থেকে ছড়িয়ে পরা ধোঁয়ায় পরোক্ষ ধূমপানের কবলে পরছেন অধূমপায়ীরা। এমনকি, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৮৫% পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও গ্রীণভ্যালী রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী জনাব নেকবর আলী তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, স্মোকিং জোন থাকা সত্ত্বেও মানুষ রেস্তোরাঁতে গিয়ে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। এতে করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, স্বাস্থ্য ক্ষতিও হচ্ছে । তাই স্মোকিং জোন আইন করে বন্ধ করা উচিত ।
নোয়াখালী জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নুর আলম সিদ্দিকী মাসুদ বলেন, ধূমপানমুক্ত রেস্তোরাঁ হলে ব্যবসার উন্নতি হবে। তাই আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমি সমর্থন দিচ্ছি, আপনাদেরকেও সমর্থন দিতে অনুরোধ করছি।
ফেনী জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সেক্রেটারী নুরুল আবসার কবীর শাহজাদা বলেন, আমরা ফেনী জেলার রেস্তোরাঁকে অনেক আগেই ধূমপানমুক্ত করতে পেরেছি। এতে সব রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়েছে। আমার মনে হয় না কেউ স্মোকিং জোনকে সার্পোট করবেন।
হাজীগঞ্জ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি হুমায়ন কবীর বলেন, আমরা চাই হোটেল-রেস্তোরাঁকে শতভাগ ধূমপানের মুক্ত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস করা জরুরী।
কুমিল্লা জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সেক্রেটারী নাসিরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা অবশ্যই চাই না রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোন থাকুক। আইন করে এটা বন্ধের পক্ষে আমরা। রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোন না রাখার বিধানটা সাধুবাদ যোগ্য।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্মোকিং জোন বাতিলের পক্ষে মতামত প্রদান করেন চাঁদপুর জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য ও হাজীগঞ্জ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সেক্রেটারী আবুল কালাম আজাদ, লক্ষীপুর জেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সেক্রেটারী মোঃ শাহজাহান প্রমুখ। তারা আরো বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া অধূমপায়ীদের নাগরিক অধিকার। পাবলিক প্লেস ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বহাল রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষা করা কখনোই সম্ভব নয়। এমতবস্থায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হসপিটালিটি সেক্টরে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙ্গামাটির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রসাশক জনাব এস এম ফেরদৌস ইসলাম বলেন, তামাকের নেপথ্যে যে একটা চক্র কাজ করছে সেটা আমদেরকে রুখতে হবে। আমরা সকলে এখানে সমবেত হয়েছি এটা বন্ধ করতে প্রতিজ্ঞতাবদ্ধ হতে হবে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভবপর বলে আমি মনে করি।
রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক রাঙ্গামাটি সম্পাদক জনাব আনোয়ার আল হক বলেন, ধূমপায়ীরা তার আপনজনকেও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির মুখে ফেলছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল বলেন, ধূমপান মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ধূমপান ক্ষতি করে থাকে।
সভার সভাপতি এবং বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আহার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এম. রেজাউল করিম সরকার রবিন জানান, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে রেস্তোরাঁকে পাবলিক প্লেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ‘ধুমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ এর বিধান রাখা হয়েছে। যা পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধুমপানমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
শারমিন আক্তার রিনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী জনাব মোঃ শরিফুল ইসলাম। প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।
সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত পাশ করে রেস্তোরাঁসহ সকল পাবলিক প্লেসকে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান রাঙ্গামাটির হোটেল রেস্তোরাঁ মালিকরা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ৬০ জন নেতৃবৃন্দ।