যশোরের উদীচী হত্যাকাণ্ডের ২৪ বছর অর্থাৎ দুই যুগ পূর্ণ হলো আজ। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ১০ জন। এতে আহত হয় আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ।
নিহতরা হলেন, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ২৪ বছর পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের। এমনকি, কারা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা-ও উদ্ঘাটিত হয়নি। দেশের প্রথম জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতে ঝুলে আছে মামলার বিচারিক কার্যক্রম। শুনানি শেষে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম কবে শুরু হবে এখনো জানে না কেউ। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতিবছরই বলছেন, তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার। সেই ব্যথা নিয়ে যশোরের মানুষ আজ পালন করছে উদীচী হত্যাকাণ্ডের ২৪তম বার্ষিকী।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে যশোর টাউন হল মাঠে চলছিল উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান। হাজারো দর্শক-শ্রোতা গান শুনছিলেন। হঠাৎ পরপর দুটি গগণবিদারি শব্দ। তারপর সারা মাঠজুড়ে আহাজারি আর কান্নার রোল। রক্তে ভেসে যায় টাউন হল মাঠের সবুজ ঘাসে ঢাকা চত্বর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে মানুষের রক্তাক্ত দেহ।
সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয় বটে; তবে তা-ও আটকে পড়ে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায়, মামলাটি দ্রুত চালু করার দাবি ক্ষুব্ধ যশোরবাসীর।
দেশে বোমা হামলার কালো অধ্যায় শুরু হয় যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়েই। অথচ সেই ঘটনাটিরই আজও বিচার হয়নি। জীবদ্দশায় নিহতদের স্বজনরা প্রিয়জনের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবেন কি না- তা নিয়েও তারা সন্দিহান।
এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বলেন, উদীচী হত্যা মামলাটি উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু আজও এই শুনানি হয়নি। আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হলে নিম্ন আদালতে বিচার কাজ শুরু সম্ভব নয়।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে একটি পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এতো বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। আমি মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবেই।’
উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে শনিবার থেকে তিনদিনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার! এই লজ্জা ও অপমান কার’ স্লোগানে কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দিনে টাউন হল ময়দানে ২৪ জন চিত্রশিল্পী রঙ তুলিতে উদীচী হত্যাকাণ্ডের সেই দিনের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন। ৫ মার্চ রোববার উদীচী কার্যালয়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আজ (রোববার) টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, শহিদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সন্ধ্যায় প্রতিবাদী মিছিল, আলোচনা ও মশাল প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।