বাদল সাহা: গোপালগঞ্জের রবিউল ইসলাম আপন এখন দেশজুড়ে আলোচিত। আপন দুবাইতে স্বর্ণ ব্যবসা করে তা জানেই না গ্রামবাসী। দীর্ঘ সময় ঢাকা থাকার পর হঠাৎ করেই লাপাত্তা হন তিনি। সংবাদ প্রকাশের পর হইচই পড়ে যায় পুরো গ্রামে। চলছে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড়।
দুবাইয়ে তার কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তারা। দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান কীভাবে বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন, তা নিয়েও কৌতূহলের শেষ নেই তাদের। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পাওয়া যায়নি তার বাবা-মা বা অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনকে।
এলাকাবাসী জানান, গ্রামের বাড়িতে এখন আর কেউই থাকে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, আপন অবৈধভাবে এই অর্থ-সম্পদ অর্জন করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
আপনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আশুতিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রয়েছে ওয়াল করা টিন সেডের একটি ঘর। ঘরের দরজায় তালা। এদিক ওদিক খোঁজ করেও পাওয়া গেলো না তার কোন আত্মীয় স্বজন। তবে পাওয়া গেলো গ্রামের দু একজনকে। তাদের সাথে কথা হলেও আপনকে সেভাবে চেনে না গ্রামের অধিকাংশ মানুষ।
তবে কথা হয়েছে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। তাদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতীয়ার রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, পত্রিকায় তাকে নিয়ে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, তা পড়ার পর আপনদের নিয়ে কথা বলাটা বিব্রতকর।
তিনি বলেন, আপনের বাবা মতিউর রহমান মোল্লা একসময় খুলনায় ফেরি করতেন। তবে জীবিকার প্রয়োজনে তিনি কোটালীপাড়ায় চলে আসেন। এরপর কৃষিকাজ ও মাছ ধরাই ছিল মূলত তার পেশা। পরে এখানে তিনি জমি কিনে বাড়ি করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিল আপন। লেখাপড়ায় সে ছিল অমনোযোগী। যতদূর জানি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সে পড়ালেখা করেছে। এরপরই জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। পরে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেটাও ১৮-১৯ বছর আগে। এই বাড়িতে আপন স্ত্রী-সন্তান শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন। তবে কয়েক মাস হলো বাড়িতে তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত তারা বিদেশে চলে গেছেন।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘হঠাৎ করে আমরা জানতে পেরেছি সে কোটি কোটি টাকার মালিক। দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। কিন্তু তার পরিবারের যে অবস্থা, এত অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, অবৈধ পথেই এই টাকা তিনি আয় করেছেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সে দোষী হলে তার বিচার হওয়া উচিত।’
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরো এলাকাবাসী জানান, আপনকে না চিনলেও তার বাবা মতিউর রহমানকে চেনেন সবাই। জমিতে কৃষি কাজ আর মাছ ধরেই চলতো তাদের জীবন। অথচ কয়েকদিন আগেও আপনের বাবা-মাকে দেখা গেলেও এখন আর তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না। জরাজীর্ণ ঘরে আপনের মা-বাবা থাকলেও এখানে কোন বাড়ি করেনি। রবিউল ইসলাম আপন কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও কিভাবে এত টাকার মালিক হয়েছেন বা কি ব্যবসা করে তা জানা নেই গ্রামবাসীর। তবে তারা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন দুবাইতে থাকে রবিউল ইসলাম আপন। সেখানে স্বর্ণের ব্যবসাও করে আপন।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, পত্রিকা পড়ে রবিউল ইসলাম আপনের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। বাড়িতে না আসায় আপনের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম ওর বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আপনের মা-বাবা গ্রামে থাকলেও তাদেরকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আপনের গ্রামের বাড়িতে এখন আর কেউ না থাকলেও আপনের দুই বোন বাগেরহাটের মোল্লাহাটে শ্বশুর বাড়ি থাকে।