কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবারও অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত। এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাত। ঈদের জামাত আয়োজন উপলক্ষে শোলাকিয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই চলছে সব আয়োজন।
ঈদ মানেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত। এই জামাত কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে ঈদের পাশাপাশি অন্যরকম আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে ধরা দেয়। বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করলে অশেষ সওয়াব পাওয়া যায়-এ বিশ্বাস থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় যান। তাই লাখো মুসল্লিকে বরণ করে নিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিন-রাতের পরিশ্রমে নামাজের উপযোগী হয়ে উঠেছে এই ঈদগাহ ময়দান। আয়োজনের তোড়জোড় দেখে খুশি এলাকাবাসীও। তবে মুসল্লিরা এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পরিধি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন জোরেশোরে।
শোলাকিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এবারের জামাত নিয়ে ৪৫টি জামাতের সাক্ষী হতে যাচ্ছি শোলাকিয়া মাঠের। ছোট থেকেই এ মাঠে জামাতে অংশ নিয়েছি। যতই দিন যাচ্ছে এ মাঠে ঈদ-উল ফিতরে মুসুল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে মানুষের জায়গা এ মাঠে নেই। তাই মুসল্লিরা মাঠের পাশের রাস্তায় জামাতে অংশ নেয়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে মাঠের পরিধি বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।
মো. রাতুল ইসলামের বাড়ি জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায়। প্রায় ১৫ বছর যাবত এ মাঠে ঈদের জামাত আদায় করছেন। এবার তার বাড়িতে চট্টগ্রাম থেকে আত্মীয়-স্বজন এসেছেন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতে। তাই আজ এসেছিলেন মাঠের প্রস্তুতি দেখতে। প্রস্তুতি দেখে ঊনি খুব খুশি। তিনি আশা করছেন, প্রতিবারেই মতো এবারও ৩ থেকে ৪ লাখ মুসল্লি এ মাঠের জামাতে অংশ নিবেন।
মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়াল রঙ করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবারও নিরাপত্তাকে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। শোলাকিয়া এ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ঈদ জামাতের মাঠ। এর গুরুত্ব সারা দেশজুড়ে। তাই এ মাঠের বৃহৎ জামাতের জন্য প্রায় সব আয়োজন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
তবে নিরাপত্তার স্বার্থে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে কেবল জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশের অনুরোধ জানিয়েছেন। ছাতা, ব্যাগ, লাঠি বা লাইটার জাতীয় কিছু মাঠে না নিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, প্রত্যেক মুসল্লি বেশ কয়েকবার তল্লাশির মুখোমুখি হবেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা। ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকেও দূরবীন নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে জামাত। আর আকাশেও উড়বে ড্রোন ও মাঠে থাকবে পুলিশের নিজস্ব ভিডিও ক্যামেরা।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঠ সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, এবারো লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে শোলাকিয়ায়।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে ছোড়া হয় শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি। নামাজের ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সংকেত দেওয়া হয়।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।