ফাঁসি নিশ্চিত জেনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম : রাখাল চন্দ্র নাহা

রুবেল মজুমদার: বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা ছিলেন ফাঁসির আসামি। সিদ্ধান্ত হয়েছিলো তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের। রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগ শেষে মুক্তি মিলেছে তার।

রোববার (১জুলাই) কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি পান। সোমবার (৩ জুলাই) বিকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাখাল চন্দ্র নাহা বলেন, ‘ফাঁসি নিশ্চিত জেনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সরকার, সাংবাদিক সমাজ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চেষ্টায় আমার ফাঁসি রহিত হয়। দুনিয়ার আলোটা দেখবো কখনো ভাবিনি। দেশের জন্য লড়াই করেছি এবং দেশের মানুষের ভালোবাসা দেখে এইটাই বুঝেছি যে, ৭১-এ যুদ্ধে গিয়ে ভুল করিনি।’

১৯৯৯ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো।

কিš ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি দেশের এ বীর সেনানীকে সাজা মওকুফ করে যাবজ্জীবন দেয়।

কুমিল্লা কারাগার সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি তার ফাঁসির সাজা মওকুফ করার পর রাখাল চন্দ্র নাহা সাজা ভোগ করেছেন ২৪ বছর ৭ মাস। এ ছাড়া কারাগারে ভালো ব্যবহারের কারণে তার ৪ বছর ৭ মাস সাজা মওকুফ হয়েছে বলেও জানান কুমিল্লা কারাগারের সিনিয়র সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন।

তার ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র নাহা বলেন, ‘বাবার জন্য আইনি লড়াই করতে গিয়ে আমাদের পরিবার নিঃস্ব। সরকার সহায়তা দিলে বাবার চিকিৎসা চালাতে পারবো। আমরা বাবা এ হত্যার সাথে জড়িত ছিল না।’

মামলার সূত্র থেকে জানা যায়, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তার ছেলে নিখিল চন্দ্র। এতে প্রতিবেশী রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহাকে আসামি করা হয়। সেদিন সন্ধ্যায়ই দেবিদ্বার থানা পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র নাহাকে গ্রেপ্তার করে। তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখাল চন্দ্র ও নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রের ফাঁসির রায় দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।

এর আগে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাহাকে দেখতে গিয়েছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts