ইফতেখার শাহীন, বরগুনা: খাল, বিল, নদী বেষ্টিত ৬টি উপজেলা নিয়ে বরগুনা জেলা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশ জেলেরা জীবিকার জন্য নির্ভর করেন মৎস্য শিল্পের ওপর। প্রায় সারা বছরই এসব নদী আর খালে মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন জেলেরা। এই পেশায় লাভজনক হওয়ায় বরগুনা জেলাজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নদী খাল বিলের পানিতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ।
সম্প্রতি জেলেদের ঝুঁকি কমাতে ও আয়ের উৎস বাড়াতে বরগুনার ৬ উপজেলায় চলছে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। এই মাছ চাষ পদ্ধতিতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। এতে একদিকে যেমন উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মাছ, পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অনেকের।
জেলা মৎস্য বিভাগ ও মাছ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনা জেলাজুড়ে নদীর পানিতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন মাছ চাষিরা। নদীর পানিতে লোহার পাইপ, বাঁশ, ড্রাম ও চারদিকে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় ভাসমান খাঁচা। বরগুনার পায়রা ও বিষখালির শাখা নদী, খাল ও বিলের পানিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন অনেক চাষিরা।
বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী জেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন প্রায় দেড় শতাধিক জেলেরা। তুলনামূলক খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় এই পদ্ধতিতে তেলাপিয়া, পাবদা, পাঙ্গাস, রুইসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করছেন তারা। পুকুরে চাষ করা মাছের চেয়ে স্বাদ ভালো হওয়ায় এই মাছের চাহিদা রয়েছে বাজারে।
সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়নের গৌরিচন্না খালে ভাসমান খাঁচায় মৎস্য চাষী ওয়ালিউল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের পরিকল্পনা এবং তার পরামর্শে তিনি গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৮ টি খাঁচা দিয়ে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এই ৮ মাসে তিনি মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ টাকার। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমার পরিকল্পনা আছে খাঁচার সংখ্যা আরও বাড়াবো।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, পুকুরের তুলনায় খাঁচায় মাছ চাষ করলে একদিকে যেমন খাবার সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে মাছের বৃদ্ধিও হয় প্রায় দেড়গুণ। আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুখ সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে বরগুনা জেলার সম্ভাবনাময় নদী এবং খালে মাছ চাষ এবং খাঁচায় মাছ চাষে চাষীদের পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করবো।