পর্যটনবান্ধব হচ্ছে ‘এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা’

এস এম শরীফুল ইসলাম: ‘এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা’ পর্যটনবান্ধব করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে শিল্পীর ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ তথা দ্বিতলা নৌকাটি।শান্ত-স্বচ্ছ প্রকৃতিঘেরা চিত্রা নদীর পাড়ে ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গের ঘাটটিও সংস্কার করা হয়েছে। দ্বিতলা নৌকার পাশ থেকে চিত্রা নদী পর্যন্ত বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে ‘এস এম সুলতান ঘাট’।এ ছাড়া নৌকাটির চারপাশে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।মাটি, ইট ও টাইলস দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে এমনটিই দেখা গেছে।

এদিকে, সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রবেশ পথটি প্রশস্তকরণের দাবি উঠেছে।পথটি অপ্রশস্ত থাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন নিয়ে যাতায়াতে বাধাপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থীদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।

লোহাগড়া থেকে আগত কলেজ শিক্ষার্থী মারজান ইসলাম, আবদুল্লাহ-আল তাফসির, সিফাত ইসলামসহ অনেক দর্শনার্থী জানান, চিত্রা নদীর পাশে সুলতান সংগ্রহশালাটি বেশ সুন্দর। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। তবে অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে যাতায়াতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষা সফর বা এক সঙ্গে অনেক লোক এখানে আসতে পারেন না। আমাদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দিবেন।

নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজির আলী বলেন, ‘মাটি ও মানুষের চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান’। তার জীবনদ্দশায় নির্মিত হয়েছে-‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’। দ্বিতলা এ নৌকাটি চিত্রা নদীর পাশে সংরক্ষিত। চিত্রা নদী থেকে ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ পর্যন্ত বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে।

১৯৯২ সালের ৭ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এস এম সুলতানের সাক্ষাতকার থেকে ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এ সাক্ষাতকারে এস এম সুলতান জানান, তিনি নৌকা নির্মাণের কাজে হাত দেন ৯০ দশকের শুরুতে। ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৫ ফুট প্রস্থের নৌকাটি সুন্দরী কাঠ দিয়ে নির্মিত। প্রায় ৬০০ লোকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এখানে ছবি আঁকার কক্ষসহ রয়েছে থাকা ও খাবার ঘর। এ ছাড়া গোসলসহ বাথরুমের ব্যবস্থা। শিশুরা নৌকায় ভেসে ভেসে ছবি আঁকবে, সুন্দরবনে গিয়ে যেমন করে অরণ্য, জীবজন্তু, নদী ও প্রকৃতি দেখবে; তেমনি ছবি আঁকবে।এ ছাড়া এস এম সুলতান এ নৌকায় চড়ে ভারতে গিয়ে ছবি প্রদর্শনী করবেন বলে সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন।তবে তার জীবনদ্দশায় সব ইচ্ছে পূরণ হয়নি।

এস এম সুলতান সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি জানান, এস এম সুলতান ঘাট, শিশুস্বর্গ ও সংগ্রহশালার বেশকিছু সংস্কার কাজ হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বমানের সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।এখানে ‘এস এম সুলতান গবেষণা ইনিস্টিটিউট’ হবে। এ ছাড়া রাস্তা প্রশাস্তকরণের জন্যও উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্মৃতি সংরক্ষণে অনেক আগেই কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি সুলতানের ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ তথা দ্বিতলা নৌকাটি চিত্রা নদীর পাড়ে সংরক্ষিত আছে। দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যে ঘাটটি সংস্কার করা হয়েছে।এ ছাড়া সুলতান কমপ্লেক্স আরো আকর্ষণীয় ও পর্যটনবান্ধব করে তুলতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এসএম সুলতান।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts