বাদল সাহা: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার মজার খেলা তৈলাক্ত কলা গাছ বেয়ে উপরে ওঠা প্রতিযোগিতা।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হেল্পলাইন সোসাইটি’ ৭ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়। আর এমন আয়োজন উপভোগে খুশি দর্শনার্থীরা।
আয়োজকরা বলছেন, দেশীয় খেলা আয়োজন করায় যুব সমাজ মাদক ও মোবাইল ফোনের আসক্তি ছেড়ে মাঠমুখি হবে এবং আগামিতেও তাদের এমন আয়োজন থাকবে।
জানা গেছে, লাঠি খেলা, হাডুডু, নৌকাবাইচ, ভেলাবাইচসহ বিভিন্ন দেশীয় খেলা বাংলার কৃষ্টি কালচারের সাথে মিশে রয়েছে। কিন্তু দেশীয় খেলাগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম এখন জানেই না এসব খেলাগুলোর নাম।
দেশীয় খেলা আর সংস্কৃতি ধরে রাখতেই শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাটের কালিকাবাড়ী গ্রামে আয়োজন করা হয় তৈলাক্ত কলা গাছ বেয়ে উপরে ওঠা প্রতিযোগিতার। কালিকাবাড়ি দূর্গা মন্দিরের সামনের মাটিতে পোতা হয় দু’টি বিশালাকৃতির কলাগাছ। পরে সেই কলাগাছের গায়ে মাখানো হয় সরিষার তেল। এলাকার ১৫ জন তরুণ প্রতিযোগী চেষ্টা করেন তৈলাক্ত কলাগাছ বেড়ে উপরে ওঠার। কিন্তু বেশ কয়েক বার চেষ্টা করলেও কিছু দূর উপরে ওঠার পর নেমে আসেতে হয় নিচে। প্রতিযোগীদের বার বার এই চেষ্টা আনন্দ দেয় দর্শনার্থীদের।
এ প্রতিয়োগীতা দেখতে ভাঙ্গারহাটের কালীকাবাড়ী গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের শিশুসহ সহস্রাধিক বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থী ভিড় জমায়। এমনকি সড়ক ও সেতুর উপর দাঁড়িয়ে এ প্রতিযোগীতা দেখে হাততালি আর হর্ষধ্বনি দিয়ে উৎসাহ দেন প্রতিযোগীদের।
তৈলাক্ত কলা গাছ বেয়ে ওঠা প্রতিযোগিতায় ৪২ ইঞ্চি উপরে উঠে পায়েল পান্ডে প্রথম, ৪১ ইঞ্চি উপরে উঠে রতন পান্ডে দ্বিতীয় ও ৪০ ইঞ্চি উপরে উঠে দিপঙ্কর পান্ডে তৃতীয় হন।
পরে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন হেল্পলাইন সোসাইটির সভাপতি ও আয়োজক ডা. আশীষ কুমার পান্ডে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এ সময় সমাজসেবক শক্তিপদ জয়ধর, আওয়ামী লীগ নেতা অরুন চন্দ্র পান্ডে, ইউপি সদস্য দুলাল চন্দ্র রায়, হেল্প লাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় পান্ডে উপস্থিত ছিলেন।
তৈলাক্ত কলা গাছ বেয়ে ওঠা প্রতিযোগিতা দেখতে আসা কলেজ ছাত্রী জুঁথি পান্ডে বলেন, এখানে গত বছরও এ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। তখন এসেছিলাম। এবারো হবে শুনে আমি আমার বাবার সাথে এ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য এসেছি। এখানে এসে এই প্রতিযোগিতা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে।
শিক্ষার্থী সুমনা বালা বলেন, আমি বিগত ৪ বছর ধরে এখানে এ প্রতিযোগিতা দেখতে আসি। খুব আনন্দমূখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আগামিতেও যাতে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য হেল্পলাইন সোসাইটির সকল সদস্যের প্রতি অনুরোধ রাখছি।
প্রথম স্থান অধিকার করা পায়েল পান্ডে বলেন, এ প্রতিযোগিতা হবে শুনে আমি নাম দিয়েছিলাম। অংশ নিয়ে প্রথম হতে পেরে খুব খুশি লাগছে। তবে এখনকার দিনে সকলেই মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে, সেই সাথে খেলার মাঠও কমে যাচ্ছে। ফলে শুধু বছরের একবার নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বছরের বিভিন্ন সময় দেশিয় খেলার আয়োজন করা উচিত।
হেল্পলাইন সোসাইটির সভাপতি ও আয়োজক ডা. আশীষ কুমার পান্ডে বলেন, আমাদের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর আমরা এ ধরণের গ্রামীণ খেলার আয়োজন করে থাকি। এ বছরও আমরা সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এই তৈলাক্ত কলা গাছ বেয়ে উপরে ওঠা প্রতিযোগিতা ও বাউল গানের আয়োজন করেছি। দেশীয় গ্রামীণ খেলা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবং যুবকদের মাদক ও মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে আগামিতেও এমন আয়োজন করা হবে।