আবু নাঈম: সমবয়সি দুইজন কাঁদা মাটিতে হাঁটুগেড়ে বসে উভয়ে উভয়ের কাঁধের নিচে মাথা গুঁজে শুরু করেন বল প্রয়োগ। যে বিজয়ী হবে তার সঙ্গে প্রতিযোগী হবে আরেক বিজয়ী। চূড়ান্ত বিজয়ীকে করা হবে পুরস্কৃত।ব্যতিক্রম এই খেলাটির নাম ‘দধি কাঁদো’।
স্থানীয়রা এটিকে কাঁদা খেলা হিসেবেই জানেন। গ্রামীণ জনপদের জনপ্রিয় এই খেলাটি এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। কালের গর্ভে এটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে পঞ্চগড়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ধরে রেখেছে এই ঐতিহ্য। প্রতিবছর জন্মাষ্টমির ‘নন্দ উৎসবে’ এ খেলায় মাতেন তারা। এবছরও খেলাটির আয়োজন করেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের সনাতনীরা।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রামের ধনেশ বাবুর বাড়ির উঠোনে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তাদের আয়োজন ছিলো- পিচ্ছিল কলাগাছ বেয়ে ওঠা, হাড়িভাঙা ও নারকেল কাড়াকাড়ি খেলা। এসব খেলা দেখতে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সি মানুষ।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দুইজন করে সমবয়সী এই খেলায় নামেন। শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি দুজনকেই হতে হয় কৌশলী। শক্তি আর কৌশলে যে এগিয়ে সেই হন বিজয়ী। ‘দধি কাঁদো’ খেলার পর শুরু হয় দাঁড় করানো পিচ্ছিল কলা গাছ বেয়ে ওঠা। দর্শক হাসানো এই খেলায় সফল হওয়া বেশ কঠিন। এরপর চলে হাড়িভাঙা ও নারকেল কাড়াকাড়ি খেলা।
আয়োজকরা জানান, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রতি বছর এই খেলার আয়োজন করেন। খেলায় প্রতিযোগী তাদের গ্রামের ছেলেরাই। এই খেলার মাধ্যমে বছরের একদিন আনন্দ উৎসব করেন তারা।
জানা গেছে, গোকুল রাজ নন্দ হলেন শ্রীকৃষ্ণের পালিত পিতা। কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল রাতে। নন্দ সেই আনন্দ উৎসব উদযাপন করেছিলেন পরেরদিন সকালে। সেই খবর শুনে সমস্ত গোকুলবাসী সেদিন মেতে উঠেছিলেন আনন্দে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করেই শুরু নন্দ উৎসব।
খেলা দেখতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম-বাংলার অনেক ঐতিহ্যবাহী খেলা এখন বিলীন প্রায়। অনেক আগে এই খেলাটি দেখেছিলাম, আজকে আবার দেখলাম ভালো লেগেছে উপভোগ করেছি।
আয়োজকদের মধ্যে প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন, এটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলা। প্রতিবছরই আমরা এখানে এই খেলার আয়োজন করি। একদিনের জন্য আনন্দে মাতি। শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা ঐতিহ্যবাহী এই ‘দধি কাঁদো’ খেলার আয়োজন করেছি। সামনের বছর আরো বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
খেলা উপভোগ করেন এলাকার ইউপি সদস্য মাহাতাব প্রধান মারিফ। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই খেলাগুলো বিলীনপ্রায়। দীর্ঘসময় ধরে খেলা উপভোগ করেছি, ভালো লেগেছে। এই আয়োজন প্রতিবছরই হবে প্রত্যাশা করছি। একইসঙ্গে হারিয়ে যাওয়া খেলার মাধ্যমে দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।