সাকিরুল কবীর রিটন : দেশজুড়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা তিন দিনের অবরোধের শেষ দিনে গভীর রাতে যশোরে একটি বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১ টার দিকে শহরের মণিহার সিনেমা হল এলাকায় বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আধা ঘণ্টায় বাসটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাসটি পুড়ে গেলেও এতে কেউ হতাহত হয়নি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিক নেতারা জানান, বিআরটিসির এই যাত্রীবাহী বাসটি শুক্রবার সকাল ৭টায় মণিহার থেকে ভোলার চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো। বৃহস্পতিবার রাতে বাসটি শহরের মণিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এনে পার্কিং করে রাখেন চালক। এরপর গাড়িটিতে মোটরপার্টস তোলা হয়। এরপর চালক ও হেলপাড় গাড়ি থেকে নেমে যান। রাত পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎ করে গাড়ির পেছনের অংশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন আশপাশের লোকজন। দ্রুত আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে
গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু এরই মধ্যে বাসের সিংহভাগই পুড়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে, বাসে আগুনের খবর পেয়ে পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা বাসের চালক, হেলপার, প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয় শ্রমিকনেতাদের সাথে কথা বলেন।
বাসটির চালক মিলন হাওলাদার জানান, তিনি গাড়িটি পার্কিং করে রেখে গোসল করতে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসেন। এসে দেখেন গাড়ির পেছনে ও উপরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
গাড়ির হেলপার মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভোলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে পার্টসপাতি তোলার পর তিনি সামনের দিকে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তিনি ফিরে এসে দেখেন বাসে আগুন জ্বলছে। কারা আগুন দিলো, বা কিভাবে আগুন ধরলো তা তিনি দেখেননি।
যশোর জেলা পরিবহণ সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুণ অর রশিদ ফুলু জানান, বিআরটিসি বাসটি কাউন্টার থেকে একটু দূরে বিপরীত দিকে পার্ক করে রাখা ছিলো। সেখানে তেমন লোকজনের উপস্থিতি ছিলো না। এরই মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
তিনি দাবি করেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের মধ্যে মণিহার এলাকায় যাতে কোনো নাশকতা না হয় সেদিকে শ্রমিকদের সতর্ক অবস্থান ছিলো। এ কারণে যশোরে অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এজন্য মরিয়া হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
যশোর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, প্রায় আধা ঘণ্টায় তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি বলেন, দুবৃর্ত্তরা আগুন দিলো না গাড়িতে থাকা পাটর্স সামগ্রীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পরে জানানো হবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা বাসের চালক, হেলপারসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছেন। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা এই নাশকতার সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে পুলিশ, ডিবি, র্যাব সবাই একযোগে কাজ শুরু করেছে। দ্রুতই তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।