শনিবার কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পর্যটন শহর এখন উৎসবমুখর। নিশ্চিত করা হয়েছে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁন্দেরপাড়ায় ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেল স্টেশন থেকে রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধনামন্ত্রী। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার রেলসহ ১৫ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৪ টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এই ১৫টি প্রকল্প হচ্ছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প (ব্যয়- ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা), মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প (ব্যয়- ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা), সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ার দ্বীপকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করণ (প্রকল্প ব্যয়- ৬৪৭ কোটি টাকা), বাঁকখালী নদীর ওপর কস্তুরাঘাট- খুরুশকুল সংযোগ সেতু (প্রকল্প ব্যয়-৪৭৭ কোটি টাকা), কক্সবাজার বিমানবন্দরের ভূমি ভরাট, প্রোটেকশান বাঁধ নির্মাণ, অ্যাপ্রোচ রোড ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ (প্রকল্প ব্যয়- ২৬২ কোটি টাকা), উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনকরণ (প্রকল্প ব্যয় ৬০ কোটি টাকা), মহেশখালী গোরকঘাটা-শাপলাপুর জনতা বাজার সড়কের মজবুত ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প (প্রকল্প ব্যয় ৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা), রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (প্রকল্প ব্যয় ২৫ কোটি ৩৩ লাখ)।
এছাড়াও উদ্বোধনের জন্য রাখা ছোট প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- কুতুবদিয়ায় কৈয়ারবিল আরসিসি গার্ডার ব্রিজ (প্রকল্প ব্যয়-৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা), চকরিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (প্রকল্প ব্যয়- ১৫ কোটি টাকা), ঈদগাঁও জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন (প্রকল্প ব্যয় ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা), মহেশখালী ইউনুচখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ (প্রকল্প ব্যয় ২ কোটি ৩৮ লাখ), উখিয়া রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ (প্রকল্প ব্যয় ২ কোটি ৮৫ লাখ), মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যায়য়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ (প্রকল্প ব্যয়-২ কোটি ৭৩ লাখ),
অপরদিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের টার্মিনাল-১ (প্রকল্প ব্যয়-১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা), টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ (প্রকল্প ব্যয় ২৭ কোটি), রামু উপজেলা জোয়ারিয়ানালা-নন্দাখালী সড়কে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ (প্রকল্প ব্যয় ২৩ কোটি ৪৯ লাখ) ও কক্সবাজার সদরে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ (৪র্থ পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ (প্রকল্প ব্যয় ১৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা)।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বড় বড় ফটক করা হয়েছে, সড়কের দুই পাশে পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।
প্রধামন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রকল্প এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন সাজ সাজ রব। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে মহাসড়কসহ প্রধান প্রধান সড়ক। বিশেষ করে মহেশখালী বাজার থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত সড়কে তোরণ ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আগে থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা, ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ করেছেন এবং ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রচার শহর থেকে শুরু করে মহল্লা পর্যন্ত করা হয়েছে। এই জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে। পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আশা করছি, সুন্দরভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কক্সবাজারে সকল প্রকার বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
তিনি বলেন, ‘জেলার আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সফরের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’