বাংলাদেশে মহিলাদের ষাটভাগই স্টার জলসার দর্শক

বিডিমেট্রোনিউজ বাংলাদেশে মহিলাদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, তাদের শতকরা ষাটভাগই ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসার দর্শক।

বাংলাদেশে যেখানে কয়েক ডজন টেলিভিশন চ্যানেলে বহু রকম বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান চলে সারাদিন, সেখানে একটি ভারতীয় চ্যানেল কেন মহিলাদের কাছে এত বেশি জনপ্রিয়?

কয়েকজন নারী বলছেন ভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি বৈচিত্রময় আর সব বয়সের মেয়েদের সঙ্গে বসে একসাথে দেখার মতো। তবে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান বলেন, ভালো মানের অনুষ্ঠানের সংকট আর অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারণেই বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা।

জরিপটি পরিচালনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ।

মূলত পরিবার পরিকল্পনা, জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিগুলোর প্রভাব কেমন- সেটি দেখতেই সাতটি বিভাগের এগারটি জেলার সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: বেলাল হোসেন বলেন তারা দেখেছেন নারীদের মধ্যে ৯০ভাগ টেলিভিশন দেখেন কিন্তু তার ষাট ভাগই ভারতীয় চ্যানেল দেখেন, ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারগুলোর তাদের ওপর কোন প্রভাব রাখছে না।

কিন্তু বাংলাদেশের নারীরা ভারতীয় বাংলা চ্যানেলের অনুষ্ঠান কেন বেশি দেখেন বা পছন্দ করেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী ইফফাত জাহিদ বলেন, “অনেক বেশি সিরিয়াল দেখায়। একেক সিরিয়াল একেক ধরনের। একটা থিম থাকে। গল্প থাকে। মডেলগুলো আকর্ষণীয়। মুভিগুলো তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা যায় আমরা, মা খালা সবাই একসাথে দেখতে পারি”।

বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর কোন অনুষ্ঠানই কি বাংলাদেশের নারীদের আকৃষ্ট করতে পারছেনা ? ভারতীয় চ্যানেলের কোন অনুষ্ঠানগুলো তারা বেশি দেখেন?

এমন প্রশ্নের উত্তরে দুলি মল্লিক, “বাংলাদেশি নিউজ চ্যানেলগুলো আছে। এর বাইরে ভারতীয় চ্যানেলই বেশি দেখি। মা, শ্বশুর শ্বাশুড়ী ভারতীয় সিরিয়াল দেখতে পছন্দ করে স্টার জলসা বা স্টার প্লাস এমন চ্যানেলগুলোতে”।

দর্শকদের এমন মতামতকে অনেকটা সত্যি বলেই মেনে নিলেন বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ।

তিনি বলেন ভালো গল্পের অভাবের পাশাপাশি অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর নাটক টেলিফিল্মসহ অনুষ্ঠানগুলো দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারছে না।

তিনি বলেন, “পার্থক্য হলো ওদের ধারাবাহিকের একটা গল্প থাকে। সে গল্প থেমে থাকে না, চলমান। একটা আগ্রহ তৈরি হয় যাতে কাল দেখতে পারি। আমাদের ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে সেগুলোর অভাব আছে। আমার মতে মূল সমস্যা বিজ্ঞাপন। দর্শকরা ইমোশনালী ইনভলভড হওয়ার সুযোগ পায় না”।

তার মতে বিজ্ঞাপন কমানো গেলে আর নাটক বা সিরিয়ালে ভালো গল্প বেশি নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশের নারী দর্শকদের মধ্যে বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর জনপ্রিয়তা আবার ফিরে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts