ঢাকায় আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উদযাপিত

আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ ) অডিটরিয়ামে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী এবং বঙ্গবন্ধু গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ আফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ. কে. এম বদরুদ্দোজা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস এমন সময় পালিত হচ্ছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজা উপত্যকা এবং জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নতুন করে গণহত্যা শুরু করে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাদের হামলায় ৩৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৪ হাজারেরও বেশি।এছাড়া গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের এই বর্বর হামলায় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ফিলিস্তিনে এই অল্প কয়েকমাসের মধ্যে এতো ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানীর পরও যদি বিশ্ববিবেক জাগ্রত না হয় তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।তবে ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বৃহৎ শক্তি মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রও তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে ।ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীরা যেভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাতে ফিলিস্তিনের বিজয় একদিন আসবেই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক কুদস  দিবস। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ এবং ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদীদের আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে ও বিশ্বের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনি (র.)এই দিবসটি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন থেকে এ দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিন ও গাজার নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে তাদের সংহতি ঘোষণা করছে। ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে এই দিনটি বড় সুযোগ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। মুসলমানদের উচিত এই সুযোগকে সচেতনভাবে উপলব্ধি করা  এবং সমস্যার সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী বলেন,  এই বছরের  আন্তর্জাতিক কুদস দিবস অন্যান্য বছরের তুলনায় একেবারেই অন্যরকম। কেননা, এ বছর ফিলিস্তিনে মানবতার যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে, ইতিহাসের ভয়াবহতম ও নৃশংসতম গণহত্যা চলছে, তা আমাদের হৃদয়কে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত করে তুলছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ বেসামরিক জনগনের উপর জায়নবাদী আগ্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান এই আক্রমণ ও গণহত্যা অভিযান থেকে আমরা দুটি জিনিস দেখতে পাচ্ছি- তাহলো এমন ভয়াবহতার মুখেও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর আশ্চর্যজনক নীরব ভূমিকা । আর এর বিপরীতে এমন নৃশংসতম জুলুমের মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের অবিশ্বাস্য ঈমানী দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধ।

ইমাম খোমেনি (রহ.) এই দিনটিকে ইসলামি দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার এই ঘোষণার কারণেই আজ আল-কুদস দিবস একটি বৈশ্বিক রুপ পেয়েছে। আনন্দের বিষয় হলো- আজ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পশ্চিমা দেশগুলোতেও ব্যপক গণজাগরণ, বিক্ষোভ ও মিছিল দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ মানবিকতার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। ইসরায়েল ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশাবাদী এভাবেই একসময় এই নির্যাতক জুলুমকারী রাষ্ট্রের পতন ঘটবে ও ফিলিস্তিন ও আল কুদস আবার স্বাধীন হবে। আর ফিলিস্তিনের এই পথচলায় গত ৪০ বছর ধরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তাদের পাশে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা বলেন,  পবিত্র নগরী আল কুদস বা বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে পবিত্র মক্কা মু‘আযযামা  ও মদিনা মুনাওয়ারার পরে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান, যেখানে অবস্থিত ইসলামের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ মসজিদুল আকসা থেকেই মিরাজে গমন করেছিলেন। তাই বায়তুল মুকাদ্দাস দুনিয়ার অন্য অনেক ভূখণ্ডের মতো কোনো সাধারণ ভূখণ্ড নয়। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী চক্র সাম্প্রদায়িক ইহুদি জায়নিস্টদের ইন্ধন জুগিয়ে ফিলিস্তিনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা একের পর এক গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মুসলমানদের বর্বরোচিতভাবে শহর ও গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করছে। ফিলিস্তিন জবরদখলদার সাম্প্রদায়িক ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম ও যুদ্ধ করে চলেছে।বিশ্বের মুসলমানদের উচিত সংগ্রামী ফিলিস্তিনীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা।

অনুষ্ঠানের পূর্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে আল কুদস মুক্তির দাবীতে একটি মিছিল বের হয়।

সূত্র : মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম- পরিচালক, জনসংযোগ বিভাগ, কালচারাল সেন্টার, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস ঢাকা।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts