রৌমারী ঘাটে কাতরাচ্ছিল স্কুলছাত্রী, ডিসি বাড়িয়ে দিলেন মানবিকতার হাত

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের রৌমারী ঘাটে তীব্র পেটের ব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছিল স্কুলছাত্রী কবিতা। এ সময় সেখান দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা সদরে ফিরছিলেন জেলা প্রশাসক সাইদুল আরিফ। বিষয়টি তার নজরে পড়ে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। হাসপাতালে পৌঁছে দেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা করান।

হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে বাড়িতে ফিরে গেছে কবিতা।

কবিতা জেলার রৌমারীর বকবান্দা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও ওই এলাকার দিনমজুর আইয়ুব আলীর মেয়ে। কবিতা চার বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।

প্রায় ১৫ দিন ধরে পেটের তীব্র ব্যাথায় ভুগছিল কবিতা। সেদিন ব্রহ্মপুত্রর রৌমারী ঘাট থেকে অসুস্থ কবিতাকে স্পিড বোটে প্রথমে চিলমারী ঘাট ও পরে সরকারি গাড়িতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাঈদুল আরিফ। কবিতার সুস্থতায় বাবা-মাসহ পুরো গ্রামবাসী জেলা প্রশাসকের এমন মানবিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

কবিতার পরিবার জানায়, গ্রাম্যডাক্তার ও রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র্র্র্রে চিকিৎসা নিলেও কোন কাজ হয়নি। গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে তীব্র পেট ব্যাথার মধ্যেই তার বাবা আইয়ুব আলী মেয়েকে নিয়ে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। মোটরসাইকেলে রৌমারী ঘাটে পৌঁছে দেয় প্রতিবেশি তার এক চাচাত ভাই। সেখানে তার বাবা কুড়িগ্রামগামী নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ঘাটের লোকজন কবিতার শারীরিক অবস্থা দেখে আতংকিত হয়ে পড়ে। তীব্র পেট ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল সে। এমনি সময় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইদুর আরিফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম রৌমারী উপজেলায় তাদের দাপ্তরিক কাজ শেষে কুড়িগ্রাম ফিরছিলেন। রৌমারি ঘাটে এসে কবিতার সংকটাপন্ন অবস্থা দেখতে পেয়ে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষনিকভাবে তার স্পিডবোটে কবিতা ও তার বাবাকে উঠিয়ে নিয়ে কুড়িগ্রাম রওনা দেন। মাত্র ২৫ মিনিটে চিলমারী ঘাটে পৌঁছে তার গাড়িতে উঠিয়ে আধাঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে কুড়িগ্রাম সমাজ সেবা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নেয়। শুরু হয় কবিতার চিকিৎসা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টানা তিন দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে কবিতা সুস্থ হয়ে উঠে।

স্কুলছাত্রী কবিতা জানায়, আমি গ্রামের ডাক্তার ও রৌমারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমরা গরীব বলে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে দ্রুত আসতে পারিনি। তবে ডিসি স্যারের মানবিকতার কারণে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি আমি।

কবিতার বাবা আইয়ুব আলী বলেন, আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। কবিতা কয়েকদিন থেকে পেটের ব্যথায় অসুস্থ হলেও টাকার অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা করতে পারিনি। সেদিন যদি ডিসি স্যার আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিতেন তাহলে পথেই দুর্ঘটনা হতে পারতো। টানা দুই সপ্তাহ থেকে সে খুব অসুস্থ ছিল।

শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান, আমরা যখন অসহায় গরীব কবিতার অসুস্থতার কথা শুনেছি। তখনি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ওষুধসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি। এ ধরনের অসহায় রোগী পেলে আমরা তাদের সহায়তা করবো।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহিনুর রহমান সরদার জানান, গত চারদিন থেকে কবিতার বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করিয়েছি। তার শরীরে বড় কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। ও কয়েকদিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছে।

জেলা প্রশাসক মো. সাঈদুল আরিফ বলেন, আমি এবং পুলিশ সুপার মহোদয় রৌমারী থেকে কুড়িগ্রাম আসার পথে রৌমারী ঘাটে কবিতা খুবই পেট ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল। এই অবস্থা দেখে তাকে দ্রত চিকিৎসার জন্য আমার সাথে কুড়িগ্রাম নিয়ে আসি। তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহণ করেছি। কবিতা সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts