ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপর আস্থা হারাচ্ছে বন্ধু আমেরিকা। তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে তাকে গদি থেকে সরানোর! সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে রাশিয়ার গোয়েন্দা দফতর ‘ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসভিআর)’।
এসভিআর সূত্রে উঠে এসেছে, জেলেনস্কির কাজকর্ম নিয়ে নাকি মোটেও সন্তুষ্ট নয় আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশগুলি। আর সেই কারণেই নাকি জেলেনস্কিকে সরানোর পরিকল্পনা চলছে।
রাশিয়ার গোয়েন্দা দফতর এ-ও দাবি করেছে, ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা-ও নাকি ঠিক করে ফেলেছে আমেরিকা।
এ-ও শোনা যাচ্ছে, জেলেনস্কিকে সরিয়ে সেই জায়গায় বসানোর জন্য ইউক্রেনের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরসেন আভাকভের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরোধিতা করে যে জেলেনস্কির সমর্থনে আমেরিকা ঢালের মতো দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, জো বাইডেনের সরকার তাকেই কেন গদি থেকে সরাতে চাইছে বলে দাবি উঠছে?
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এসভিআর দাবি করেছে, আমেরিকার ধনকুবেররা জ়েলেনস্কির প্রতি ক্রমশ অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছেন। কারণ, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে যে কোটি কোটি ডলার ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তা কী ভাবে খরচ করা হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন তাঁরা।
দাবি উঠেছে, যুদ্ধের নামে যে অর্থ সাহায্য জেলেনেস্কি আমেরিকা এবং বন্ধু দেশগুলির থেকে পাচ্ছেন, তা ব্যক্তিগত ভোগবিলাসে নয়ছয় করতে শুরু করেছেন। আর তা নিয়ে তার উপর বিরক্ত আমেরিকার রাজনীতিক থেকে বিত্তশালীরা।
আমেরিকার প্রভাবশালীরা নাকি বলতে শুরু করেছেন যে, ইউক্রেনের হিতের কথা আর ভাবছেন না জেলেনস্কি। বরং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একের পর এক এমন পদক্ষেপ করছেন যা, ইউক্রেনের জন্য ‘ক্ষতিকর’।
সম্প্রতি রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ঢুকে হামলা চালাতে শুরু করেছে ইউক্রেনীয় সেনা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোদ জ়েলেনস্কি। জেলেনস্কির বিবৃতি ইতিমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলেছে। রাশিয়া যেমন চমকে গিয়েছে, তেমনই অবাক হয়েছে ইউক্রেনের বন্ধু দেশগুলিও।
সূত্রের খবর, আমেরিকাও নাকি ইউক্রেনের এই পদক্ষেপের কথা আগে থেকে ঠাওর করতে পারেনি। এ নিয়েও নাকি আমেরিকা বিরক্তি প্রকাশও করেছে।
রুশ গোয়েন্দা দফতরের মতে, এই সব কারণেই আরও নিয়ন্ত্রিত এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে জেলেনেস্কির পদে বসাতে চাইছে আমেরিকা। আর সেখান থেকেই নাকি আভাকভের কথা মাথায় এসেছে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসেন আভাকভ। ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন।
এসভিআরের দাবি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাঁদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ‘উপযুক্ত’ মনে করা হচ্ছে আভাকভকেই।
রাশিয়ার গোয়েন্দা দফতরের মতে, আমেরিকা মনে করছে যে পশ্চিমি দেশগুলি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তাদের সঙ্গে আভাকভের ‘ঘনিষ্ঠ’ যোগাযোগই তাঁকে বাকি প্রার্থীদের থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে।
এসভিআরের দাবি, হোয়াইট হাউস মনে করছে যে ইউক্রেনের নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে রাশিয়ার সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আরও ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে পশ্চিমি দেশগুলি।
এসভিআর দাবি করেছে, আভাকভকে গদিতে বসানো নিয়ে ইউক্রেনের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে আমেরিকা। যাঁদের মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পিয়োত্র পোরোশেঙ্কো, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো এবং জ়েলেনস্কির নিজের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও রয়েছেন।
এ বছরের জুনেও এসভিআর ইঙ্গিত দিয়েছিল, ‘প্রয়োজন ফুরোলে’ জ়েলেনেস্কিকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করবে আমেরিকা এবং তাদের জোটসঙ্গীরা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্যাঙ্ক এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনা রাশিয়ার সীমান্ত পার করে সম্প্রতি ৩০ কিলোমিটার ভিতরে চলে গিয়েছে। ঘাঁটি গেড়েছে রাশিয়ার পশ্চিমে কুর্স্ক অঞ্চলে।
রাশিয়ার ভূখণ্ডে টানা সাত দিন ধরে হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন। কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হামলা চালানোর পরে সে প্রসঙ্গে মুখ খুলে বড় মাপের সাফল্য দাবি করেছেন জেলেনস্কি। এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে শনিবার তিনি বলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে আক্রমণ শানাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় হামলা ঠেকাতে তৎপর হয়েছে মস্কোও। রুশ সেনা কুর্স্ক এবং অন্য দু’টি সীমান্ত অঞ্চলে অভিযান শুরু করেছে। মস্কো থেকেও কুর্স্কের পথে রওনা দিয়েছে পুতিনের সেনা। সঙ্গে রয়েছে প্রচুর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি এবং অস্ত্র।
কুর্স্ক অঞ্চলের প্রতিরক্ষায় ট্যাঙ্ক ও রকেট লঞ্চিং সিস্টেম পাঠিয়েছে মস্কো। ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শহর কুর্স্ক, বেলগোরদ ও ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাদের দেশ ছাড়া করতেও উঠেপড়়ে লেগেছে রুশ সেনা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ আগ্রাসী মোড় নিতে পারে বলেও দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।
প্রসঙ্গত, গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে রাশিয়ার। সেই যুদ্ধে আমেরিকা-সহ প্রথম বিশ্বের বহু দেশই দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনের পাশে। গত দু’বছরের কিভ-মস্কো সংঘাতের তীব্রতা কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। তবে যুদ্ধ চলেছে একটানা।
রুশ আগ্রাসনের মুখে হাল ছাড়েনি ইউক্রেন। রীতিমতো লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই আবার জেলেনস্কি বদলের জল্পনা উস্কে দিয়েছে এসভিআর।