বৈচিত্রপূর্ণ প্রকৃতির টানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটতো পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। কিন্তু প্রকৃতির এমন মায়াভরা আঙিনা এখন অনেকটাই পর্যটকশূন্য। বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে মৌলভীবাজারের পর্যটনে।
শুধুমাত্র ব্যবসা ধরে রাখতেই প্রতি মাসে কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে এ জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে রয়েছে পুঁজি হারানোরও ভয়। ফলে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্প। তাই পর্যটন শিল্পকে ধরে রাখতে দাবি উঠেছে সরকারি পৃষ্টপোষকতার।
এই জেলাটিকে সাজাতে কোন কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। চা বাগানের সবুজ গালিচা, লাউয়াছড়ার প্রাণ-প্রকৃতি কিংবা হাওরের অথই জল-এ নিয়েই পযর্টন জেলা মৌলভীবাজার। একসময়ে পর্যটকমুখর থাকতো জেলাটি। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো জেলার অন্তত ১০০টিরও বেশি দর্শনীয় স্থান। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বন্যার কারণে গত এক দেড়মাস ধরেই প্রকৃতির এমন মায়াভরা আঙিনা এখন পর্যটকশূন্য। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন অনেকে ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান। তবে পর্যটক আসলেও তা খুবই নগণ্য। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ব্যবসায়ীদের।
পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে দাস সুমন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিদেশি পর্যটক আসা কমে গিয়েছে। এ সময়ে প্রচুর বৈদেশিক পর্যটক আসতেন, কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকেই এখন আসতে চাচ্ছেন না। এবিষয়ে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
রিসোর্ট লেমন গার্ডেন এর ম্যানেজার (অপারেশন) মামুনুর রশিদ মামুন, প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এর সহকারী ফ্রন্ট ম্যানেজার আছাদুজ্জামান ও বালিশিরা রিসোর্ট এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ জানালেন- ব্যবসা এখন খুবই খারাপ। স্টাফ চালানোই এখন কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। পর্যটক টানতে কোনও কোনও হোটেল রিসোর্ট ২০-৬০% পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। তবে এটা আশার কথা যে, আস্তে আস্তে কিছু পর্যটক আসা শুরু করেছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নেই পর্যটকদের ভিড়। অথচ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পর্যটকদের সংখ্যা দিয়েই সারা জেলার পর্যটক নির্ণয় করা হয়।
পর্যটক গাউড এম এ আহাদ, জিপচালক নয়ন ও দোকানদার আব্দুল মুকিতসহ অনেকেই জানালেন, পর্যটক না থাকায় তারা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। শুক্র ও শনিবারে কিছু পর্যটক আসলেও বাকি সময়টা অলস পারতে হচ্ছে।
তারা জানান, বিদেশি পর্যটক না আসায় সমস্যায় পর্যটন ব্যবসায়ী ও গাইডরা। প্রতিটি দোকানদার ও গাড়িচালকরা অপেক্ষা করছেন সুদিনের।
এদিকে আগাম বুকিং না থাকায় হোটেল-রিসোর্ট মালিকদের আর্থিক ক্ষতির পরিমান বেড়েই চলছে। ব্যাংক ঋণের বোঝা ও ঘাটতি দিতে দিতে অনেকের এখন মাথায় হাত। সেই সঙ্গে পুঁজি হারানোর ভয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টদের হিসেব অনুযায়ী প্রতিমাসে এই শিল্পে শুধুমাত্র ব্যবসা ধরে রাখতেই গুনতে হচ্ছে কোটি টাকা।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম এ এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতিকে সচল করতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হবে সকল ব্যবস্থা।