মোকাম্মেল হক মিলন, ভোলা: বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দায়ের করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেলেন ভোলার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বন্ধুজন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক আলহাজ্ব মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে চলমান মামলাটির রায়ে তিনিসহ সকল আসামী বেকসুর খালাস পান। গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দৈনিক ভোলার বাণীকে মামলার রায়ে খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ভোলার গণমানুষের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাহজাহান ছিলেন ভোলার বেসিক ও ফান্ডামেন্টাল ডেভলপমেন্টের আসল হিরো। তার হাত ধরেই ভোলার আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ সকল উন্নয়ন শুরু হয়। ভোলার মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নত করতে তিনি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। মোশারফ হোসেন শাহজাহান যতবার মন্ত্রী হয়েছিলেন মন্ত্রিত্ব যাবার পর আওয়ামীলীগ সরকার ততবারই তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। আমি তাহা ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে ভোলার মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তার নেয়া সকল সামাজিক কাজে আমি তার সাথে ছিলাম। এর ফলশ্রুতিতে যাকাত ফান্ডের টাকা তসরুপের মিথ্যা ও কল্পিত অভিযোগ টেনে আওয়ামীলীগ সরকার মোশারফ হোসেন শাহজাহানের সাথে আমাকেও মামলায় আসামি করে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৫ সালে আমরা সাবেক মন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাহজাহান এর দিকনির্দেশনায় বন্ধুজন পরিষদের মাধ্যমে ভোলাকে নিরক্ষর মুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। তখন ভোলা থানায় প্রায় ৯৮ হাজার নিরক্ষর মানুষ ছিল। বন্ধুজন পরিষদের মাধ্যমে নিরক্ষর মুক্ত কার্যক্রমে আমরা ৯৯ ভাগ সফল হয়েছি। যেটি তৎকালীন সরকারি অ্যাসেসমেন্টেও উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে আমরা ভোলাকে কুঁড়ে ঘর মুক্ত করার প্রকল্পের উদ্যোগ হাতে নেই। তখন ভোলা সদর উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ কুঁড়ে ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করত। সে সময় দরিদ্র ও অসহায় মানুষ ইরি ধানের নাড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে থাকতো। দুই তিন মাস পর দেখা যেত নারা পচে গিয়ে ঘরের ভিতরে থাকা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে পড়তো। মানুষের এসব দুর্ভোগ লাঘবের জন্য শাহজাহান সাহেব এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন কুঁড়ে ঘরে যারা থাকে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহায়। তাদেরকে এই দুর্ভোগ থেকে আমাদেরই মুক্ত করতে হবে। ভোলাকে কুঁড়ে ঘর মুক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আমাকে প্রধান করে বললেন ভোলাকে কুঁড়ে ঘর মুক্ত করতে হবে। এরপর ভোলাকে কুড়েঘর মুক্ত করার জন্য আমরা বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে কাজে লেগে যাই তখন আমরা ব্যানারে লিখেছি ভোলা কুঁড়ে ঘর মুক্ত।
এসময় মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, কুঁড়ে ঘরের বাসিন্দাদের দুঃখ কষ্ট মোশারেফ হোসেন শাজাহান যেভাবে অনুভব করেছেন তখন ভোলার অন্য কোন নেতা এভাবে অনুভব করিনি। ভোলা সদর উপজেলার সকল ইউনিয়নে এ কুঁড়ে ঘর দেখার ভাগ্য ৩ জন নেতার হয়েছে একজন হলেন মোশারফ হোসেন শাজাহান অন্য দুজন হলেন তোফায়েল আহমেদ ও নাজিউর রহমান মঞ্জু। মোশারফ হোসেন শাহজাহান, নাজিউর রহমান মন্জুর মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুভব করলেও অন্যজন অনুভব করেনি। ভোলাকে কুঁড়ে ঘর মুক্ত করার উদ্যোগে আমরা বন্ধুজন পরিষদের মাধ্যমে ১০ হাজার ঘরকে টিনশেডে রূপান্তর করেছি। সাবেক মন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাজাহান ভোলাকে কুঁড়ে ঘর মুক্ত করার জন্য চার থেকে পাঁচবার কুয়েত গিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে সহায়তার টাকা আনার ব্যবস্থা করার জন্য। পরবর্তীতে তিনি তার মন্ত্রণালয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যাকাত ফান্ড থেকে ১ হাজার ঘরের টাকা দিয়েছেন। প্রতিটি ঘরের জন্য ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল যার মাধ্যমে তখনকার বাজারে দের বান্ডিল টিন তিনটি মস্কা ও নাট বল্টু সরবরাহ করা হয়েছে। মোশারফ হোসেন শাহজাহানের উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্য সরঞ্জাম যেমন-খুঁটি, বাশ ইত্যাদি স্থানীয়রা প্রদান করেছেন। তখন কিছু লোক অভিযোগ তুলে শাজাহান সাহেব আওয়ামীলীগকে ঘর প্রদান করে। তখন তার দিকনির্দেশনে আমরা ব্যানারে লিখেছি গরিবের কোন দল নেই।
তিনি আরও বলেন, ভোলার এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়নের ক্ষেত্রে মোশারেফ হোসেন শাজাহানের অবদান ছিল না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ভোলাকে রক্ষা করতে মোশারফ হোসেন শাহজাহানের দিকনির্দেশনায় ভোলায় বিকেলে ফোন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে করে ভোলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি গাছের উপর দিয়ে গিয়েছে এবং ১০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য বেশি উৎপাদন হয়েছে। ভোলার গ্যাস প্রকল্প তিনি করেছেন, বিদ্যুৎ প্রকল্প তিনি করেছেন।
এছাড়াও আমরা মোশারফ হোসেন শাহজাহানের দিকনির্দেশনে বন্ধুজন পরিষদের মাধ্যমে প্রায় নির্মাণ করেছি যার মধ্যে ৭০টি আমার নিজের হাতে নির্মাণ করা। আমরা প্রায় ২ থেকে ৩শ’ মসজিদে গভীর নলকূপ দিয়েছি এবং অজুখানা নির্মাণ করে দিয়েছি। ভুলের মানুষের সুপেয় পানি ব্যবস্থার জন্য প্রায় এক হাজার ডিপ টিউবওয়েল প্রদান করেছি। ভোলার বেসিক ও ফান্ডামেন্টাল ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান এর বিকল্প কেউই ছিল না।
তিনি বলেন, ভোলার মানুষের সেবা করতে গিয়ে মোশারেফ হোসেন শাজাহান এর সাথে আমিও আওয়ামী লীগের করা মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলার আসামি হই। গত ১৫ বছর এই মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আমি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কত টাকা চলে গেছে তার কোনো হিসেব নেই। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আমি একবার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে বিচরককে অনুরোধ করে বলেছি আমার বয়স ৮৫ বছর। গত ১৫ বছর হাজিরা দিয়ে আসতেছি, আমার শরীর আর সাড়া দিচ্ছে না। তখন আদালত আমাকে সশরীরে হাজিরা দেওয়া থেকে মুক্তি দেন। এর পরবর্তীতে সকল আসামির অনুপস্থিতিতে নজির বিহীন একটি রায় দেয় ঢাকা জজকোর্ট বিশেষ আদালত-১। আদালতে মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ভুয়া ও কাল্পনিক হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত সকল আসামিকে এ মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।