ধামরাইয়ে পুলিশ পরিচয়ে আরেক নারীর শ্লীলতাহানি!

 

রাসেল হোসেন, ধামরাই: ঢাকার ধামরাইয়ে চলন্ত বাসে নারী পোশাক শ্রমিক গণধর্ষণের রেশ না কাটতেই শনিবার পরিবহণে  চাঁদাবাজির এলাকা খ্যাত এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনে পুলিশ পরিচয়ে আরেক নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।

এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের স্টাফরা গভীর রাতে  ওই নারীর ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে ঘরের বাইরে নিয়ে  স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দেয় ও মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। এ সময় তাদের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। এক্সেল স্টেশনের ৫জন স্টাফকে আটক করতে সমর্থ হলেও বাকিরা  দৌড়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি বাথুলি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের চেয়ারম্যান জনিকে অবহিত করলে তিনি স্টেশন ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমানকে রোববার সকালে ঘটনাস্থলে পাঠান।

তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতার হাতে আটক ৫ জনের বিচার করার শর্তে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ঘটনায় জড়িতদের এক্সেল রোড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে।এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে  আশংকা করা হচ্ছে।

এর আগেও এ এক্সেল রোড কন্ট্রোল স্টেশনে আরও কয়েক নারী শ্লীলতাহানির শিকার হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে গেছে।

সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শৈলাবিল আজিম গ্রুপ অব ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার মেকানিক্যাল বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আমিন আল মামুন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার বিকাল ৫টার দিকে বাথুলী এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আসেন। কিছু সময় এ দম্পতি এস্থানে বসে গল্প করেন। এ সময় এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের স্টাফ মোঃ নাসির হোসেন, মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ রাসেল হোসেন, মোঃ হিমেল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম ৫ জনে মিলে পুলিশ পরিচয়ে ওই দম্পতিকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতে শুরু করে। ওই দম্পতি জানায়, তারা ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর রামপুরা কাজী অফিসে কাবিন রেজিষ্ট্রি মূলে বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী ফার্মগেইটের একটি আইটি ফার্মে চাকরি করে। আর তিনি ধামরাইয়ের কারখানায় চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের দক্ষিণপাশে ললিতনগরে মৃত সেনা কর্মকর্তা ময়ছের আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন।  এসব কথা শুনার পরও তারা স্বামীর সামনেই বিভিন্নভাবে স্ত্রীকে অপদস্থ করে। তাদেরকে ভুয়া স্বামী স্ত্রী আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয় মোটা অংকের চাঁদা। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে ওই দম্পতি মুক্তি পায়।

এরপর গভীররাতে ওই ৫জন আরও কয়েকজন স্টাফকে সঙ্গে করে তাদের বাসায় প্রবেশ করে। ৪-৫ জনে স্বামীকে ডেকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় । এ সুযোগে আরও ৩-৪জন তার স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং শ্লীলতাহানি করে। এসময় তাদের গগণবিদারি আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের ৫জনকে আটক করে।

এ ব্যাপারে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের চেয়ারম্যান জনি বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তারা যে অপরাধ করেছে এ দায় দায়িত্ব কোম্পানি নেবেনা। আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তাতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না।

এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যানের নির্দেশ মত আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। এলাকাবাসী যেভাবে তাদের বিচার করে খুশি আমি তাতেই রাজি আছি। এতে আমার কোন ব্যক্তিগত মতামত নেই।

ইঞ্জিনিয়ার আমিন আল মামুন বলেন, ওরা যে আচরণ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। শুধু তাই নয় আমার মায়ের সঙ্গে ওরা নোংড়া কথাবার্তা বলেছে এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছে।

এ ব্যাপারে আজিম গ্রুপের কর্মকর্তা মোঃ সানি  বলেন, আমাদের কারখানার একজন অফিসারকে এভাবে অপমান অপদস্থ করবে তা আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা। তাই কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এব্যাপারে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ রিজাউল হক দীপু বলেন, এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনের স্টাফরা যা করেছে তা খুবই ন্যাক্কারজনক অপরাধ। কোন ঘটনা ঘটলে তা পুলিশ ও এলাকাবাসী দেখবে, তারা নয়।কাজেই অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Print Friendly

Related Posts