রাজধানীতে লিফটে এক শিশুর নির্মম মৃত্যু

বিডিমেট্রোনিউজ॥ রাজধানীতে একটি ভবনের ত্রুটিপূর্ণ লিফটের দুই দরজার মধ্যে চাপ খেয়ে এক শিশুর নির্মম মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শান্তিনগরের আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের গ্রীণ পিস নামের অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আলবিরা রহমান (৯) ওই অ্যাপার্টমেন্টের ১৫ তলার বাসিন্দা শিপলুর রহমানের মেয়ে। শিপলু আলী বাবা ডোর কোম্পানির মালিকের ছেলে।

শিপলু চৌধুরীর ভাই পিয়াল জানান, গত বৃহস্পতিবার ছিল আলভিরার মা রুনির জন্মদিন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই রাতে বাইরে যাচ্ছিল ডিনার করতে। রুনির কোলে ছিল ছয় মাস বয়সী শিশুসন্তান। আর আলভিরা তার বাবার হাত ধরে ছিল। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শিপলু যথারীতি ড্রাইভার বাদশাকে ফোন দেয় গাড়ি রেডি করতে। তখন লিফটটা ১৫ তলায় এসে থামল। কিন্তু লিফটি উপরের দিকে যাচ্ছিল। কিছু একটা কনফিউশন থেকে উঠবে কি উঠবে না এমন পরিস্থিতি কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু হঠাৎ কী ভেবে আলভিরা লিফটে ঢুকে পড়ে। তখনও আলভিরা বাবার হাত ধরা ছিল। আর লিফটের দরজাটি তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। শিপলু তখনও পেছনের দিকে টান দিলে আলভিরা হয়ত বেরিয়ে আসতে পারত। কিন্তু আদরের মেয়েকে পেছন থেকে টান দিলে ব্যথা পেতে পারে তাই সে টান দেয়নি, আর তখনও আলভিরার বডির বেশিরভাগ অংশ লিফটে ঢুকে যাচ্ছিল।

তিনি বলেন, শিপলু ভেবেছিল আলভিরা উঠে যাক নামার সময় সবাই একসঙ্গে নামবে। এমনতো হর-হামেশাই আমাদের জীবনে ঘটছে। কিন্তু আশ্চার্যজনকভাবে ঠিক ওইসময় লিফটের সেন্সর ঠিকভাবে কাজ করল না। আলভিরার হাত বা পায়ের একটি অংশ লিফটে আটকে গেল। লিফটের সেন্সর কাজ করল ১৫ এবং ১৬ তলার মাঝখানে। কিন্তু দরজাতে আলভিরার পা আটকে আছে। লিফটের ছাঁদের চাপে মেয়েটার মাথা ফেটে গেল। ওর শরীরের গরম রক্ত ফিনকি দিয়ে এসে লাগল জন্মদাতা বাবা-মায়ের গায়ে। মেয়েটা এভাবে ১৫-২০ মিনিট আটকে থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল। পরিবারের পক্ষ থেকে অ্যাপার্টমেন্টের অফিসে ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেনি। ১৫ থেকে ২০ মিনিট শিশুটি আটকে ছিল আহত অবস্থায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরেছে বাবা-মায়ের শরীরে। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য আর কি হতে পারে।

শিশুটির আত্মীয় সুজন মাহমুদ জানান, লিফটের সেন্সর কাজ না করুক, তাড়াতাড়ি দরজাটা খুললে মেয়েটি হয়ত আহত হত বা কিছুটা ব্যথাই পেত। তবুও তো সাতরাজার ধন বাবা-মায়ের বুকে বেঁচে থাকত। কিন্তু কিছুতেই কিছু করা গেল না। স্কয়ার হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে অনেক চেষ্টা করেও আলভিরাকে ফেরানো গেল না।

তিনি আরো বলেন, মায়ের জন্মদিনই যে মেয়ের মৃত্যু দিবস হবে তা কে জানত? অ্যাপার্টমেন্টটির একাধিক বাসিন্দা জানান, ১৮০টি ফ্ল্যাটের এই বিশাল এপার্টমেন্টে এক হাজারেরও বেশি মানুষ বাস করে। তিনটি বিল্ডিংয়ের জন্য রয়েছে ছয়টি লিফট, তবে সবসময় চালু থাকে একটি। আগে তিনজন লিফটম্যান কাজ করলেও এখন কাজ করছেন একজন। চার হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ হিসাবে মাসে সাত লাখ টাকা সার্ভিস চার্জ উঠলেও মাঝেমাঝে লিফটের বাটন, সেন্সর কাজ না করা, পর্যাপ্ত সিকিউরিটি গার্ড না থাকা, লিফটম্যান এবং গার্ড দিয়ে কমিটির লোকজনদের বাজার করানো নিয়েও রয়েছে নানা অশান্তি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত আলভিরার প্রথম জানাজা গতকাল শুক্রবার ওই অ্যাপার্টমেন্টের নিচে অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদজুমা উত্তরার ১৩নং সেক্টরের লেক মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে ১২ নং সেক্টরের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

Print Friendly

Related Posts