সিরিজ জিতে বছর রাঙাল টাইগাররা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে, তবে ওয়ানডে অভিষেকে ঠিকই হাসল মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল। চায়ের নগরীতে টাইগারদের প্রথম জয়টি সিরিজ নির্ধারণীতে হওয়ায় আনন্দ দ্বিগুণ হল সিলেটবাসীর। গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ কখনও আবার ‘সিলেট, সিলেট’ কোরাসে হেমন্তের শেষ রাতটি উষ্ণ করে তুললেন টাইগারপ্রেমীরা।

শুক্রবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এলো ৮ উইকেটের সহজ জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১৯৯ রানের মাঝারি লক্ষ্য বাংলাদেশ টপকে গেছে ৩৮.৩ ওভারে, ২ উইকেট হারিয়ে। তামিম ইকবালের অপরাজিত ৮১ ও সৌম্য সরকারের আগ্রাসী ৮০ রানের ইনিংসে হেসেখেলে সিরিজ (২-১) নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

টেস্টের পাশাপাশি ওয়ানডে সংস্করণেও দারুণ একটি বছর কাটাল বাংলাদেশ। শুরুর মতো শেষটাও হল জয় দিয়ে। এবছর খেলা তিনটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই জয়ের তৃপ্তি নিয়ে ২০১৮ সালের ওয়ানডে ক্যালেন্ডার শেষ করল মাশরাফী-সাকিব-তামিমরা। যার দুটিই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে। একটি তাদের মাটিতে, একটি ঘরের মাটিতে। নতুন বছরে বাংলাদেশের লড়াই শুরু হবে ফেব্রুয়ারিতে, নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে।

এবছর ২০ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ১৩ ম্যাচে। ২০১৫ সালে ১৮ ওয়ানডে খেলে ১৪ ম্যাচ জিতেছিল টিম টাইগার্স। সেটিই সেরা সাফল্যমণ্ডিত বছর। জয়ে তেমন আরেকটি বছরের শেষভাগ রাঙাল টাইগাররা।

‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ কথাটা বেশ মানিয়ে যাচ্ছে ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলের বেলায়। অলিখিত ফাইনালে নামার আগে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের গতিতে কাবু করার হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন। অথচ তাদের দলের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার ওসানো টমাস একাদশেই ঠাই পাননি।

মন্থর উইকেটে নিজ দলের পেসারদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতেই করেছিলেন সেটি না বললেও চলছে। তাদের ব্যাটসম্যানরা যে পুঁজি এনে দিয়েছেন তাতে কিছু করারও ছিল না ক্যারিবীয় অধিনায়কের। ১৯৮ রান নিয়ে কি এখনকার বাংলাদেশের সঙ্গে লড়াই হয়?

কিমো পলের বলে ২৩ রান করে লিটন দাস যখন আউট হন, ততক্ষণে পঞ্চাশের (৪৫) কাছে বাংলাদেশের স্কোর। ওপেনিং জুটির ভিত আত্মবিশ্বাসের পালে যোগায় হাওয়া। সৌম্যকে নিয়ে তামিমের দ্বিতীয় উইকেট জুটির ১৩১ রান নিয়ে যায় জয়ের কাছে।

৮১ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলে সৌম্য যখন কিমো পলের বলে বোল্ড হন, তখন জয় থেকে ২৩ রান দূরে বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েস একাদশ থেকে ছিটকে পড়ায় ছয় থেকে প্রমোশন নিয়ে তিনে নামেন এ বাঁহাতি। টপ অর্ডারে ফিরেই ৫ চার ও ৫ ছক্কায় খেলে যান প্রত্যয়ী ইনিংসটি। ১০৪ বলে তামিমের ৮১ রানের পরিচ্ছন্ন ইনিংসটিতে ছিল ৯টি চার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে আবারও প্রতিরোধ গড়েন শাই হোপ। একপ্রান্ত আগলে পুরো ৫০ ওভার লড়েন উইন্ডিজ ওপেনার। অপরাজিত থেকে করেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তবে অন্যপ্রান্ত ছিল বেশ নড়বড়ে, বিবর্ণ। এ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের একার লড়াই বিফলেই গেছে শেষ পর্যন্ত।

১০৮ রান করে অপরাজিত থাকেন হোপ। মিরপুরে আগের ম্যাচে ১৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে সিরিজে সমতা (১-১) এনেছিলেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিবীয়দের বাতিঘর হয়ে জ্বললেন চায়ের শহরে এসেও।

সাকিব আল হাসানকে সোজা ব্যাটে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা হোপ ৯ চার ও এক ছক্কায় তিন অঙ্কে পৌঁছান ১২১ বল মোকাবেলায়। অপরাজিত ইনিংসটি সাজান ১৩১ বলে।

বেলা ১২টায় শুরু হওয়া দিবা-রাত্রির ম্যাচে দর্শকের জোয়ার বইতে শুরু করে দুপুরের পর। ছুটির দিনে গ্যালারিত তারা থিতু হওয়ার আগেই অবশ্য বল হাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

নতুন বল হাতে পেয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘোরান মিরাজ। সাজঘরে পাঠান প্রথমসারির চার ব্যাটসম্যানকে। ২৬তম ওভারেই বোলিং কোটা পূর্ণ করেছেন। ১০ ওভারে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন এ অফস্পিনার। গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৬ রানে ৩ উইকেট ছিল আগের সেরা।

মিরাজ প্রথম দুই ব্যাটসম্যানকেই ফেরান সাজঘরে। বাঁহাতি ওপেনার চন্দরপল হেমরাজকে (৯) ফিরিয়ে হানেন প্রথম আঘাত। উইন্ডিজের দলীয় রান তখন ১৫। হোপের সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়া ড্যারেন ব্রাভো (১০) ফেরেন বোল্ড হয়ে।

উইন্ডিজ ডেরায় তৃতীয় আঘাত রুবেল হোসেনের জায়গায় একাদশে আসা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। ক্যারিবীয়রা যখন শতরানের কাছে তখন মারলন স্যামুয়েলস (১৯) বোল্ড হন তরুণ পেসারের বলে। ইনসুইংয়ের মুখে জায়গায় দাঁড়িয়ে লংঅন দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন স্যামুয়েলস। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে স্টাম্প উপড়ে যান এ ডানহাতির।

পরের ওভারেই নিজের তৃতীয় সাফল্যের দেখা পান মিরাজ। এ অফস্পিনারের ‘বানি’ বনে যাওয়া শিমরন হেটমায়ার এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে সাজঘরে পাঠিয়ে প্রথমবার ৪ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন মিরাজ।

৯৬ থেকে ৯৯- ৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারালে দিশেহারা হয়ে পড়ে ওয়েস্ট উন্ডিজ।

হোপের সঙ্গে রোস্টন চেজ জুটি গড়ে বিপর্যয় কিছুটা সামাল দেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৬ রান যোগ করে চেজ(৮) ফেরেন সাকিবের প্রথম শিকার হয়ে। পরে এ বাঁহাতি স্পিনার ফেরান ফাবিয়ান অ্যালেনকে (৬)। কিমো পলকে (১২) বোল্ড করে অষ্টম আঘাত হানেন মাশরাফী।

খানিকপরে কেমার রোচকে (৩) এলবিডব্লিউ করেন দেশের হয়ে ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা নড়াইল এক্সপ্রেস। হোপ ও দেবেন্দ্র বিশু (৬*) দশম উইকেট জুটির অবিচ্ছিন্ন থেকে ২১ রান যোগ করলে দুইশর (১৯৮/৯) কাছে যায় সফরকারীরেদ পুঁজি।

Print Friendly

Related Posts