রমা চৌধুরী আর নেই

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রমা চৌধুরী আর নেই। সোমবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশে।

জানা যায়, রোববার সন্ধ্যার দিকে রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। রাতেই তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা শত চেষ্টা করেও তাকে আর বাঁচাতে পারেননি। সোমবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রমা চৌধুরীর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরের দিকে মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

Roma_1
২০১৩ সালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রমা চৌধুরী

রমা চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিই ছিলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ)। ১৯৬২ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তিন পুত্রসন্তানের জননী ছিলেন। থাকতেন পৈতৃকভিটা পোপাদিয়ায়। তার স্বামী ভারতে চলে যান। ১৩ মে সকালে পাকিস্তানি সেনারা এসে চড়াও হয় তার ঘরে। এ সময় দুগ্ধপোষ্য সন্তান ছিল তার কোলে। এরপরও তাকে নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন তিনি। পাকিস্তানি সেনারা গানপাউডার দিয়ে আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দেয় তার ঘরবাড়ি। পুড়িয়ে দেয় তার সব সম্পদ। নিজের নিদারুণ এই কষ্টের কথা তিনি লিখেছেন ‘একাত্তরের জননী’ গ্রন্থে।

জয়লাভের পর ২০ ডিসেম্বর তার বড় ছেলে সাগর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর ১ মাস ২৮ দিন পর মারা যায় আরেক ছেলে টগর। এরপর তিনি জুতা পরা বাদ দেন। পরে অনিয়মিতভাবে জুতা পরতেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর আরেক ছেলে মারা গেলে পুত্রশোকে তিনি আর জুতা পায়ে দেননি। খালি পায়ে হেঁটে নিজের লেখা বই বিক্রি করে চলতেন এই নারী।

তবু জীবনযুদ্ধে হার মানেননি এ বীরাঙ্গনা। মুক্তিযুদ্ধের পর শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা। লিখে ফেলেন ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’ সহ ১৮টি বই। এসব বই বিক্রি করেই চলতো তার সংসার।

কোমরের আঘাত, গল ব্ল্যাডার স্টোন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রমা চৌধুরী প্রথম ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

Print Friendly

Related Posts