বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ নিরাপদে বাড়ি ফিরে এল টাইগাররা। নিজের মাটিতে পা রাখার আনন্দই আলাদা। কিন্তু এবারের ফেরায় সেই উচ্ছলতা দেখা যায়নি কারো চোখেমুখে। তবু সহি সালামতে ফিরে আসতে পারায় কৃতজ্ঞতা মহান সৃষ্টিকর্তাকে।
নিরাপদে দেশে ফিরে আসলেও ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় ক্রিকেটারদের যে মানসিক ধাক্কা লেগেছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে বেশ।
ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বদলে গেছে বাস্তবতা। শেষ টেস্ট বাতিল হওয়ায় নিউজিল্যান্ড থেকে আজ দেশে ফিরেছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা।
রাত ১০টা ৪০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।
ক্রিকেটার, কোচসহ দেশে ফিরেছেন মোট ১৯ জন। প্রধান কোচ স্টিভ রোডস দলের সঙ্গে এলেও পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক ও ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ণ নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
বিমানবন্দরে নেমে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘বিপর্যয়ের মধ্যে দেশে ফিরতে পারছি এজন্য নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি।’
নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ ঘন্টার ভ্রমণ শেষে শনিবার রাতে দেশে ফিরে বেশি কথা বলেননি জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ শিবির। দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা তলানিতে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে সময়ের প্রয়োজন। প্রয়োজন সবার সহযোগীতা।
তাইতো দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন মাহমুদউল্লাহ, ‘দেশবাসীর প্রতি বলব আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা এই মানসিক অবস্থা থেকে বের হতে পারি।’
নিউজিল্যান্ডের নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুললেও মাহমুদউল্লাহ তার কথায় কোনো আক্ষেপ রাখলেন না। বরং ধন্যবাদ দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড বোর্ডকে, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই বিসিবিকেও। পাপন ভাইকে (নাজমুল হাসান)। ওনাদের সঙ্গে যখন কথা হলো তখন ওনারা বললেন আমাদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনবেন। ’
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন ৪৯ জন। আহত হন আরো ৪৮ জন। হ্যাগলি ওভালের খুব কাছের নূর মসজিদেই ঘটেছে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। যেখানে জুমার নামাজ আদায় করার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। মিনিট পাঁচেকের জন্য হামলার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যান তামিম-মুশফিকরা।
ওই সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকা দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট পরে ঘটনার বর্ণনায় বলেছিলেন, ‘মসজিদ আমরা বাস থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। আমরা হয়তো ৫০ গজ দূরে ছিলাম। আর যদি ৩-৪ মিনিট আগে চলে আসতাম; তাহলে আমরা মসজিদেই হয়তো থাকতাম। হয়তো বিশাল, ভয়ানক একটা ঘটনা ঘটে যেতে পারত।’
৮-১০ মিনিট বাসে বসে থাকার পর নেমে হ্যাগলি পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে মাঠে ফিরে ড্রেসিংরুমে ঘণ্টা দুয়েক অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন তারা। এরপর ফেরেন হোটেলে। বাসে চড়ার আগে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলন একটু দেরিতে শেষ হওয়ায় এবং সেখানে পৌঁছার পর একজন নারী মসজিদের ভেতরে গোলাগুলি চলছে জানিয়ে আর সামনে না এগোনোর আহ্বান জানানোয় রক্ষা পায় দল।
এদিকে টাইগাররা ফেরার পর পরিবারকে সময় দিতে ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
হামলার পরপরই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মানসিক অবস্থা বুঝে গিয়েছিলেন নাজমুল হাসান। শনিবার বিমানবন্দরে বোর্ড প্রধান সাংবাদিকদের বললেন, ‘তারা কঠিন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এসেছে। আমি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি ঘটনার পরপরই, আমরা সকলেই বুঝতে পারছিলাম ওদের মধ্যে দিয়ে কী যাচ্ছে মানসিকভাবে। তখন থেকেই তারা অপেক্ষায় ছিল কখন দেশে আসতে পারবে, কত তাড়াতড়ি।’
ক্রাইস্টচার্চ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকা, প্রায় ১৮ ঘণ্টা বিমানে কাটাতে হয়েছে তামিমদের। বিমানে সেভাবে ঘুম ছিল না কারও চোখে। ঘটনার পর রাতটাও নির্ঘুম কেটেছে তাদের। তবে শেষ পর্যন্ত যে তারা নিরাপদে দেশে ফিরতে পেরেছেন, সবচেয়ে বড় স্বস্তি এটিই। সব ভুলে মাথা ঠাণ্ডা করে ক্রিকেটারদের নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলেন বোর্ড সভাপতি।
‘রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) বলেছে তারা ঘুমাতে পারেনি সারারাত। এত লম্বা ভ্রমণে তারা সবাই ক্লান্ত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই। এখন ওদের সঙ্গে কথা বলারও কিছু নেই। আমরা সবাই ওদেরকে বলেছি, যাও, বাসায় যাও। সবকিছু বাদ দিয়ে, ঠাণ্ডা মাথায়, নিজেদের মতো করে, যা ভালো লাগে সেভাবে কাটাও।’
‘সবকিছু ঠাণ্ডা হলে তারপর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করো। খেলাধুলা নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো চিন্তা ভাবনা করবে না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবে। আমরা আছি, আমাদের যদি কোনো সহযোগিতা লাগে কারো, আমরা আছিই। এটাই ওদের বলা হয়েছে’- বলেন নাজমুল হাসান।